
ছবি: সংগৃহীত
আজ (২৭ এপ্রিল) সারা দেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা তাদের ছয় দফা দাবি আদায়ের জন্য এ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানসহ রাজধানী ঢাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসছেন। পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের জোট কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ এই কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
গত শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তাদের ফেসবুক পেজে সফলভাবে কর্মসূচি পালনের জন্য দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানানোর আহ্বান জানানো হয়।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ইতিহাস
গত ২২ এপ্রিল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের জোট কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা করে। ওই সভায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার পর, আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছিল। তবে, পরবর্তী দিনেই শিক্ষার্থীরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়া ও তাদের দাবির প্রতি উপেক্ষা দেখানোতে ২৩ এপ্রিল আবারও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এই আন্দোলনের মূল দাবিগুলি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ও সংস্কারের লক্ষ্যে। তাদের ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে:
ছয় দফা দাবি
১. ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের প্রমোশন কোটা বাতিল করা: শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করা হোক। এছাড়া, ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করা এবং তাদের পদবি পরিবর্তনসহ মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করা হোক।
২. ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে বয়সের সীমা নির্ধারণ: শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন যে, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তি গ্রহণের সুযোগ বাতিল করা হোক। তারা উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে এবং একাডেমিক কার্যক্রম ধাপে ধাপে ইংরেজি মাধ্যমে পরিচালনার দাবি জানাচ্ছেন।
৩. ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কর্মসংস্থান: শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, যে সব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
৪. কারিগরি সেক্টরে শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করা: শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, কারিগরি সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং কারিগরি শিক্ষা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী নিয়োগ দিতে হবে। তারা এই পদগুলোতে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবিও জানিয়েছেন।
৫. স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা: শিক্ষার্থীদের দাবি, দেশের কারিগরি শিক্ষা উন্নয়নের জন্য একটি স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
৬. কারিগরি শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা: শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, পলিটেকনিক এবং মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হোক। একই সঙ্গে নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক এবং মনোটেকনিক শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
আন্দোলনকারীদের প্রস্তুতি
আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচি সারা দেশে ব্যাপক আকারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রাস্তায় মিছিল, স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তাদের দাবি তুলে ধরছেন। ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীরা সমবেত হয়ে তাদের দাবির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেষ্টা করছেন। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তারা কোনোভাবেই তাদের দাবি থেকে পিছপা হবেন না এবং যতদিন না তাদের দাবি পূর্ণাঙ্গভাবে মেনে নেওয়া হয়, ততদিন তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা পরিষ্কার হয়নি। তবে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বারবার সরকারের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলির মধ্যে বেশ কিছু সংস্কারমূলক উদ্যোগের পরামর্শ রয়েছে, যা কার্যকর হলে দেশের কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ