
ছবি: সংগৃহীত
৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এবং পিএসসি সংস্কারের ৮ দফা দাবিতে আন্দোলনরত চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য একটি নতুন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি শাহবাগে চাকরিপ্রত্যাশীদের ব্লকেডের পর একাধিক আলোচনার পর গৃহীত হয়। পিএসসি সংস্কার কমিশন গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, যিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন।
গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে শাহবাগ চত্বরে চাকরিপ্রত্যাশীরা পিএসসি সংস্কারের দাবিতে অবস্থান নিয়ে ব্লকেড শুরু করেন। তাদের এই পদক্ষেপে শাহবাগ মোড় দিয়ে চত্বরের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর পিএসসির সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে আলোচনার একটি বিরতি অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনার এক পর্যায়ে, ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময়, সরকারিভাবে জানানো হয় যে, বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানকে কমিটির প্রধান করে একটি পিএসসি সংস্কার কমিশন গঠন করা হবে। এই নতুন কমিশন পিএসসি সংস্কারের ৮ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা করবে এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথ নির্ধারণ করবে।
শাহবাগে অবস্থান নেওয়া চাকরিপ্রত্যাশীরা তাদের ৮ দফা দাবি তুলে ধরেছেন, যা পিএসসি পরীক্ষা ব্যবস্থা ও সংস্কার নিয়ে অনেক গুরুতর পরিবর্তন চাইছে। তাদের দাবির মধ্যে অন্যতম হল:
৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন পুনরায় তৈরি করা।
৪৪তম বিসিএসের ভাইভা শেষ করার পর ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া।
পিএসসি অফিসে গিয়ে খাতা দেখানোর ব্যবস্থা করা।
পিএসসি সদস্য সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ এ বাড়ানো।
ভাইভা শেষে রেজাল্টের আগে ক্যাডার চয়েজের সুযোগ প্রত্যাহার।
৪৫-৪৭ বিসিএসের ক্ষেত্রে ভাইভা পূর্বে ক্যাডার চয়েজ পূর্ণ করার সুযোগ প্রদান।
প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভার মার্ক প্রকাশ করা এবং লিখিত পরীক্ষার ন্যূনতম দুই মাস আগে রুটিন ঘোষণা করা।
সুপারিশ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ করে গেজেট প্রণয়ন।
এ আন্দোলন শুরু হয় গত ২৪ এপ্রিল থেকে, যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শাহ আলম স্নেহ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মো. আওরঙ্গজেব, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী মো. সিরাজুস সালেহীন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষার্থী সাকির রাজু ভাস্কর্যে অনশন শুরু করেন। তাদের দাবি ছিল, পিএসসি পরীক্ষার প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতিতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কিছু পরিবর্তন আনা।
অনুষ্ঠিত আলোচনার পর, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বলেছেন, “৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া, সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পিএসসি সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্ব দেবেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। এই কমিটি পিএসসি সংস্কারের জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করবে।”
তিনি আরও জানান, নতুন কমিশন পিএসসি সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গভীর আলোচনা করবে, যার মাধ্যমে ন্যায়বিচার এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ হবে।
চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন এবং পিএসসি সংস্কারের দাবি পুরো দেশের চাকরির বাজারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই আন্দোলন কেবল সরকারি চাকরির পরীক্ষার সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচারিক প্রক্রিয়ার দিকে সুরাহা আনবে না, বরং এটি আরও বৃহত্তর সরকারি কাঠামো ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সংস্কারের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। তবে, পিএসসি সংস্কারের জন্য বিভিন্ন পক্ষের মতামত এবং সরকারের প্রস্তুতি আরও কার্যকর ও ত্বরান্বিত হতে হবে।
এই পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে, পিএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে চাকরির সুযোগ পাওয়া দেশব্যাপী তরুণদের জন্য একটি নতুন এবং স্বচ্ছ পথের সূচনা হতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ