
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকাই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে ঈদের মুক্তি একটি বড় ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর ঈদের সময় মুক্তি পায় নতুন সিনেমা, আর সেই সিনেমাগুলো দর্শকদের মধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। তবে, এই বছর ঈদের সিনেমাগুলোর মাঝে বিশেষভাবে শাকিব খানের সিনেমা দুটি - ‘বরবাদ’ ও ‘অন্তরাত্মা’ - প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার পর সেভাবে সাড়া ফেলতে পারেনি।
শাকিব খান, যে বর্তমানে ঢাকাই সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যস্ত নায়ক, তার সিনেমাগুলো দর্শক কেবল ঈদ উৎসবে ভালো ব্যবসা করতে পারে, তা প্রমাণিত হয়েছে। গত বছরের মতো এই বছরও তার সিনেমা 'অন্তরাত্মা' মুক্তির পর ব্যাপক দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছে। মাত্র দুদিনের মাথায় সিনেপ্লেক্স থেকে সিনেমাটি তুলে নেওয়া হয়, যা শাকিবের জন্য একটি বড় অপমান। ‘অন্তরাত্মা’কে দর্শকরা তেমন একটা গ্রহণ করেননি, এবং প্রেক্ষাগৃহে তার শোও নেই এখন।
এর বিপরীতে, ‘বরবাদ’ সিনেমাটি কিছুটা সাফল্য পেয়েছে। সিঙ্গেল স্ক্রিন এবং মাল্টিপ্লেক্স মিলিয়ে ১২০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার পর এটি দর্শক আগ্রহ অর্জন করেছে এবং কিছুটা সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সিনেমার গল্প, নির্মাণ এবং প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা এটি কিছুটা এগিয়ে রেখেছে। তবে, এক্ষেত্রে বড় প্রশ্ন উঠছে যে, শাকিব খানের নামের উপর নির্ভরশীল সিনেমা আর দর্শকদের নজর কাড়ছে না।
এছাড়া, ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত অন্যান্য সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘দাগি’, ‘জংলি’, ‘চক্কর ৩০২’, এবং ‘জ্বীন-৩’ও আলোচনায় এসেছে। ‘দাগি’ সিনেমাটি, যেখানে আফরান নিশো এবং তমা মির্জা প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন, বেশ ভালো ব্যবসা করছে। এই সিনেমার শো বাড়ানোর জন্য সিনেপ্লেক্সগুলো আরও শো খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একদিকে, ‘জংলি’ সিনেমাটি খুব কম প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলেও, দর্শকদের মধ্যে ভাল সাড়া ফেলেছে। সিয়াম আহমেদ এবং শবনম বুবলী অভিনীত ‘জংলি’ সিনেমাটি ঈদের ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত প্রতিটি শো হাউজফুল হয়ে গেছে।
অপরদিকে, ‘চক্কর ৩০২’ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার হিসেবে বেশ ভালো প্রাপ্তি পেয়েছে, বিশেষত সিনেমার গল্পের জোরে। এটি সরকারি অনুদানে নির্মিত এবং শুধুমাত্র মাল্টিপ্লেক্সে মুক্তি পেয়েছে। সিনেমার গল্প এবং নির্মাণ অনেকের মন জয় করেছে, এবং সিনেবোদ্ধারা আশা করছেন এটি আরও সময় নিয়ে ভালো ব্যবসা করবে।
এ বছর ঈদের সিনেমার মাঝে সবচেয়ে হতাশাজনক ফলাফল দেখা গেছে ‘জ্বীন-৩’ সিনেমায়। যদিও মুক্তির আগে সিনেমার ‘কন্যা’ গানটি বেশ ভাইরাল হয়েছিল, তবুও এটি মাত্র দুটি মাল্টিপ্লেক্সে মুক্তি পেয়ে ফ্লপ হয়েছে। সিনেমাটি দর্শকদের কাছে তেমন কোনো সাড়া ফেলতে পারেনি এবং এর সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এই বছরের ঈদে শাকিব খানের সিনেমা দুটির ব্যর্থতা এবং অন্য সিনেমাগুলোর সাফল্য আবারও প্রমাণ করল যে, দর্শকদের কাছে সিনেমা কেবল তারকা অভিনয় বা নামের কারণে সফল হয় না, বরং সিনেমার গল্প, নির্মাণ, এবং দর্শকদের আগ্রহকেই মূল প্রাধান্য দিতে হয়। শাকিব খানের নাম দিয়ে সিনেমা চালানোর ধারণা যে পুরোনো হয়ে গেছে, এটি এবারের ঈদে আরও একবার প্রমাণিত হলো।
বাংলাবার্তা/এমএইচ