
ছবি: সংগৃহীত
বলিউড তারকা শাহরুখ খানের স্ত্রী ও খ্যাতনামা ইন্টিরিয়র ডিজাইনার গৌরী খান গত বছরই মুম্বাইয়ের অভিজাত এলাকায় চালু করেছিলেন একটি বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ। নাম রেখেছিলেন ‘তোরি’। চোখ ধাঁধানো অভ্যন্তরীণ ডিজাইন, রাজকীয় পরিবেশ ও খাবারের জন্য রেস্তোরাঁটি খুব দ্রুতই খ্যাতি লাভ করে। এখানে নিয়মিতই উপস্থিত হতে দেখা যায় বলিউডের তারকাদের। অথচ সম্প্রতি এই রেস্তোরাঁ নিয়ে শুরু হয়েছে এক বিতর্ক—এবার অভিযোগ উঠেছে এখানে পরিবেশিত হচ্ছে ‘নকল পনির’।
এ অভিযোগ উত্থাপন করেছেন জনপ্রিয় ইউটিউবার ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার সার্থক সচদেব। তার প্রকাশিত একটি ভিডিও ইতোমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যার ফলে রেস্তোরাঁ ‘তোরি’ ও এর মালিক গৌরী খানকে নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
কী ঘটেছে আসলে?
সার্থক সচদেব সম্প্রতি এক ভিডিও সিরিজে মুম্বাইয়ের একাধিক সেলিব্রিটির মালিকানাধীন রেস্তোরাঁ পরিদর্শন করেন। যার মধ্যে ছিল গৌরী খানের ‘তোরি’, বিরাট কোহলির ‘ওয়ান-৮ কমিউন’, শিল্পা শেঠির ‘বাস্তিয়ান’ এবং ববি দেওলের ‘সামপ্লেস এলস’। প্রতিটি রেস্তোরাঁয় গিয়ে তিনি পরীক্ষা করেন, সেখানে পরিবেশিত পনির আসল কি না।
এই পরীক্ষার জন্য তিনি ব্যবহার করেন আয়োডিন ড্রপ। সাধারণভাবে এই পরীক্ষাটি স্টার্চ শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়—স্টার্চ থাকলে আয়োডিনের সঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় বসে তা কালো বা নীল রঙ ধারণ করে।
সার্থকের ভিডিওতে দেখা যায়, গৌরীর রেস্তোরাঁ ‘তোরি’-তে পরিবেশিত পনিরের একটি টুকরোয় আয়োডিন ড্রপ পড়তেই তা দ্রুত নীল-কালো হয়ে যায়। এই ফলাফলের ভিত্তিতে তিনি দাবি করেন, “শাহরুখ খানের স্ত্রী গৌরী খানের রেস্তোরাঁয় পরিবেশিত পনির ছিল নকল। এটা দেখে আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম।”
অন্য রেস্তোরাঁয় কী পাওয়া গেছে?
একই পরীক্ষা তিনি করেন অন্যান্য সেলিব্রিটিদের রেস্তোরাঁয়। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয়, বিরাট কোহলি, শিল্পা শেঠি বা ববি দেওলের রেস্তোরাঁয় পরিবেশিত কোনো পনিরেই রঙ পরিবর্তনের লক্ষণ পাওয়া যায়নি। যার অর্থ, সেসব পনিরে স্টার্চ ছিল না—অর্থাৎ তারা হয়তো খাঁটি দুধের পনির ব্যবহার করছে।
এই ভিন্ন ফলাফলই যেন আরও বেশি করে আলোচনায় এনে দিয়েছে ‘তোরি’ রেস্তোরাঁকে। সার্থকের ভিডিও কয়েক মিলিয়ন ভিউ অর্জন করেছে এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছে নেটিজেনরা, অনেকেই গৌরী খানের রেস্তোরাঁকে ব্যয়বহুল অথচ প্রতারণামূলক বলে আখ্যা দিচ্ছেন।
গৌরীর রেস্তোরাঁর পাল্টা ব্যাখ্যা
তবে ‘তোরি’ রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষও চুপ করে থাকেনি। ভিডিওটির কমেন্ট সেকশনে তারা লিখে, “আয়োডিন টেস্ট স্টার্চ শনাক্ত করে ঠিকই, কিন্তু এতে বোঝা যায় না পনির আসল না নকল। যেহেতু আমাদের পরিবেশিত থালায় সয়া-ভিত্তিক উপাদান ছিল, তাই পরীক্ষার এমন ফলাফল এসেছে। আমরা সর্বদা বিশুদ্ধ পনির পরিবেশন করে থাকি।”
অর্থাৎ, রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ দাবি করছে—ওই পনিরে সয়া বা ব্যাটার জাতীয় উপাদান থাকার কারণে আয়োডিন টেস্টে এমন প্রতিক্রিয়া এসেছে। এর মানে এটা নকল পনির নয়, বরং কিছু অতিরিক্ত উপাদানের কারণে এমন ফল এসেছে।
সার্থকও অবশ্য তাতে প্রতিক্রিয়া দিতে ভুল করেননি। তিনি পাল্টা মন্তব্যে লেখেন, “তাহলে কি এখন আমাকে ওখানে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে? তবে আপনাদের খাবার সত্যিই দারুণ ছিল।” তার এই মন্তব্যে অনেকেই মনে করছেন, তিনি সরাসরি রেস্তোরাঁকে আক্রমণ করতে চাননি, বরং বিষয়টি তুলে ধরাই ছিল তার উদ্দেশ্য।
বিশেষজ্ঞদের মত কী?
এই বিতর্কে মতামত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরাও। গ্রেটার নয়ডার যথার্থ হাসপাতালের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. কিরণ সোনি বলেন, আয়োডিন টেস্ট আসলেই স্টার্চ শনাক্ত করতে পারে, তবে এটি এককভাবে প্রমাণ করতে পারে না যে কোনো পনির নকল। তবে দুধ থেকে তৈরি খাঁটি পনিরে সাধারণত স্টার্চ থাকার কথা নয়।
তিনি আরও বলেন, “অনেক সময় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত পনিরে ওজন বা গঠন বৃদ্ধির জন্য স্টার্চ মেশানো হয়। আবার কিছু কিছু সয়া বা ব্যাটার উপাদানেও স্টার্চ থাকে, যা আয়োডিন পরীক্ষার ফলে প্রভাব ফেলতে পারে।”
এখনো নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন—‘তোরি’ রেস্তোরাঁর পনির সত্যিই ভেজাল ছিল কিনা। তবে এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও সামনে এল খাবারের গুণগত মান ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন। নামী-দামি সেলিব্রিটিদের মালিকানাধীন রেস্তোরাঁ হলেও, খাদ্য নিরাপত্তা ও ভোক্তা স্বার্থে নিয়মিত নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সার্থকের এই ভিডিও হয়তো শুধু এক রেস্তোরাঁ নয়, বরং গোটা ফুড ইন্ডাস্ট্রিকে আরও স্বচ্ছ ও সচেতন হওয়ার বার্তা দিয়ে গেল। এখন দেখার বিষয়, গৌরী খান ও তার টিম এই বিতর্ক সামাল দিয়ে রেস্তোরাঁটির ভাবমূর্তি পুনঃস্থাপন করতে কতটা সক্ষম হন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ