
ছবি: সংগৃহীত
২০২২ সালের আলোচিত ও বহুল চর্চিত ‘টিপকাণ্ড’ আবারও উঠে এলো আলোচনার কেন্দ্রে। তবে এবার সামাজিক প্রতিবাদ নয়, বরং আইনি লড়াইয়ের মোড়কে। সেই সময়ের ঘটনার পর চাকরি হারানো পুলিশ সদস্য নাজমুল তারেক এবার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় নিজের সামাজিক ও পেশাগত ক্ষতির দায়ে জনপ্রিয় ১৬ জন তারকাসহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঢাকায় দায়ের করেছেন একটি মানহানির মামলা।
মামলার বিবরণ:
গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল), ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হকের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন সাবেক পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেক। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি শেরেবাংলানগর থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় নাজমুল অভিযোগ করেছেন, ২০২২ সালের ২ এপ্রিল ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে কেন্দ্র করে দেশে-বিদেশে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, ওইদিন তেজগাঁও কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ড. লতা সমাদ্দার রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় একজন পুলিশ সদস্য তাকে টিপ পরার কারণে কটূক্তি করেন—এই অভিযোগ জানিয়ে লতা সমাদ্দার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট দেন, যা মুহূর্তেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
তবে পুলিশ সদর দফতরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষে নাজমুল তারেককেই অভিযুক্ত করা হয়, এবং তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শোবিজ অঙ্গনের বহু তারকা লতার সমর্থনে সামাজিক মাধ্যমে ‘টিপ পরা’ ছবি পোস্ট করেন এবং প্রতিবাদ জানান।
মামলার আসামির তালিকায় কারা রয়েছেন?
মামলায় সরাসরি নাম উল্লেখ করা ১৬ তারকার মধ্যে রয়েছেন—
সুবর্ণা মোস্তফা
আনিসুর রহমান মিলন
সাজু খাদেম
প্রাণ রায়
সায়মন সাদিক
মনোজ প্রামাণিক
স্বাধীন খসরু
চয়নিকা চৌধুরী
আশনা হাবিব ভাবনা
জ্যোতিকা জ্যোতি
উর্মিলা শ্রাবন্তী কর
দেবী সান
নাজনীন নাহার চুমকি
সুষমা সরকার
কুসুম সিকদার
এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যারা সামাজিক মাধ্যমে লতা সমাদ্দারের পোস্টের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে মতামত দেন।
বাদীর অভিযোগ কী?
চাকরিচ্যুত নাজমুল তারেকের দাবি,
তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল।
তার বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে যেভাবে প্রচারণা চালানো হয়েছে, তাতে তিনি শুধু চাকরি হারাননি, পেশাগতভাবে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট তারকারা জনপ্রিয়তার সুযোগ নিয়ে একতরফাভাবে তাকে দোষী বানিয়ে প্রভাব বিস্তার করেছেন, যা আইনসঙ্গত নয়।
তার বিরুদ্ধে যেসব মন্তব্য ও প্রতিবাদ এসেছে, সেগুলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনমত প্রভাবিত করার জন্য করা হয়েছে, যার ফলে তিনি সামাজিকভাবে হেয় হয়েছেন।
চাকরি ফেরত পেতে আইনি লড়াইও চালিয়ে যাচ্ছেন
মামলার পাশাপাশি নাজমুল তারেক চাকরি ফিরে পেতে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন, এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবরও লিখিত আবেদন করেছেন।
পটভূমি:
২০২২ সালের ২ এপ্রিলের ঘটনার সূত্রপাত হয় তখন, যখন লতা সমাদ্দার অভিযোগ করেন—রাস্তায় পুলিশের পোশাকধারী এক ব্যক্তি তাকে বলেন, “টিপ পরছোস কেন?” এরপরই তিনি সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি শেয়ার করলে সারাদেশে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই এটিকে নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ হিসেবে তুলে ধরেন। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে বহু তারকা ‘টিপ পরা ছবি’ পোস্ট করে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
পরবর্তীতে পুলিশ তদন্ত করে নাজমুল তারেকের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে দোষ খুঁজে পেয়ে তাকে চাকরিচ্যুত করে। সেই সিদ্ধান্তের পর থেকেই নাজমুল তারেক সামাজিকভাবে চাপে পড়েন এবং দীর্ঘদিন নিশ্চুপ থাকার পর এবার আইনের আশ্রয় নিলেন।
এখন দেখার বিষয়, মামলাটি তদন্তের পর কী তথ্য-প্রমাণ বেরিয়ে আসে এবং এর পরিণতি কী হয়। জনপ্রিয় তারকাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ এবং পুলিশ সদস্যের মানহানির অভিযোগ—এই দুই মেরুতে থাকা বিষয়টি নতুন করে সামাজিক বিতর্কও জন্ম দিতে পারে। পাশাপাশি, এই মামলার পরিণতিতে ‘সামাজিক প্রতিবাদ বনাম আইনি জবাবদিহি’—এই চিরন্তন দ্বন্দ্বও উঠে আসবে আলোচনার কেন্দ্রে।
এদিকে মামলার বিষয়ে এখনও অভিযুক্ত তারকাদের পক্ষ থেকে কেউ প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে মামলাটি যেহেতু আলোচিত ইস্যুর সঙ্গে জড়িত, তাই এর প্রতিক্রিয়া আসন্ন দিনগুলোতে দেশের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অঙ্গনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ