
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকাই সিনেমার পরিচিত মুখ, আলোচিত অভিনেতা ও প্রযোজক জায়েদ খান দীর্ঘ সময় ধরেই ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। গত ১০ মাস ধরে তিনি দেশটির বিভিন্ন শহরে স্টেজ শো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পারফরম্যান্সে অংশ নিচ্ছেন। এই সময়টাতেই নিজেকে বদলে ফেলার এক অনন্য যাত্রায় নেমেছেন তিনি। বদলেছেন চেহারা, ফিটনেস, এমনকি স্টাইলও। আর এই রূপান্তরের অনুপ্রেরণা হিসেবে বলিউড সুপারস্টার সালমান খানকেই সামনে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি নিজেই।
তবে এই অনুকরণ এখন সামাজিক মাধ্যমে পরিণত হয়েছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রশংসার চেয়ে কটাক্ষই বেশি ধেয়ে আসছে ‘বাংলার ভাইজান’ খেতাব পাওয়া জায়েদের দিকে।
সালমানের ছায়া নাকি কপি?
সম্প্রতি নিজের ফিটনেস জার্নির একটি ছবি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেন জায়েদ খান, যেখানে তাকে দেখা যায় জিমের ভেতর সালমান খানের মতো ভঙ্গিমায় ক্যামেরার সামনে পোজ দিতে। তার পরনে ছিল বডিফিট টিশার্ট, কালো জগারস এবং চোখে সানগ্লাস—যা একেবারেই সালমানের ‘সিগনেচার লুক’ হিসেবে পরিচিত।
ছবিটি ভাইরাল হতে না হতেই শুরু হয় নেটিজেনদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন—‘ভাই চেষ্টা করছে, সেটা ভালো কথা। তবে অরিজিনাল হবার চেষ্টা করা উচিত, কপি করে ভাইজান হওয়া যায় না।’
একজন ব্যবহারকারী মজা করে লিখেছেন, “দেখে তো মনে হচ্ছে গুলিস্তানের সালমান খান!”
আরেকজনের ভাষ্য, “সালমান খান আর জায়েদ খান যদি একসাথে দাঁড়ায়, তাহলে বাকি সবাই আলাদা করে চিনে ফেলবে!”
অনুকরণ নাকি অনুসরণ?
নিন্দুকদের দিক থেকে আসা কটাক্ষের মধ্যেও জায়েদ খানের আত্মবিশ্বাসে ভাটা নেই। তিনি মনে করেন, নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে হলে কঠোর অনুশীলন ও অনুপ্রেরণা—এই দুটোই জরুরি। সালমান খানের দীর্ঘদিনের ফিটনেস ডিসিপ্লিন, রুটিন এবং স্টাইল তাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। তার কথায়, “আমি সালমান খানের ভক্ত, এটা তো লুকানোর কিছু নেই। আমি যেভাবে নিজেকে গড়ছি, সেটা এক ধরনের অনুপ্রেরণা। তবে আমি নিজেই আমার মতো।”
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে তিনি নিয়মিত জিমে সময় দেন, কঠোর ডায়েট মেনে চলেন এবং দিনে কয়েক ঘণ্টা শরীরচর্চা করেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন আন্তর্জাতিক ট্রেইনারের সাথেও কাজ করেছেন তিনি।
সালমানের ছায়া কেবল শরীরেই নয়:
নেটিজেনদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, জায়েদের সালমান-প্রীতি কেবল জিম ও ফিটনেসেই সীমাবদ্ধ নয়।
তার ছবি তোলার ধরন
ইনস্টাগ্রামে ব্যবহার করা ক্যাপশন
এমনকি ফ্যাশন স্টেটমেন্টেও পাওয়া যাচ্ছে সালমান খানের প্রভাব।
জায়েদের সাম্প্রতিক বেশ কিছু ছবিতে দেখা যাচ্ছে ‘সিঙ্গেল লুক’-এর পোজ, ‘জ্যাকেট-সানগ্লাস-টুপি’ কম্বিনেশন—সব কিছুতেই সালমান ঘরানার ছাপ স্পষ্ট।
চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার:
২০০৮ সালে ‘ভালবাসা ভালবাসা’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন জায়েদ খান। এরপর একে একে অভিনয় করেন ‘প্রতিশোধের আগুন’, ‘অন্তর জ্বালা’, ‘নগর মাস্তান’, ‘ভালোবাসা সীমাহীন’, ‘প্রেম করবো তোমার সাথে’ এবং ‘দাবাং’ নামের এক সিনেমায়, যা বলিউডের দাবাং-সিরিজের নামের সাদৃশ্যেই আলোচিত হয়েছিল।
তার অভিনীত সিনেমাগুলোর বাণিজ্যিক সফলতা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও নিজেকে আলোচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে বেশ পারদর্শী এই অভিনেতা।
ঢালিউডে ফেরার প্রস্তুতি:
নতুন লুক ও স্টাইল নিয়ে তিনি যে ঢালিউডে শক্তভাবে ফিরতে চান, তা বলাই বাহুল্য। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালেই তিনি নতুন কিছু প্রজেক্টের কাজও শুরু করেছেন বলে ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে।
জায়েদ খান নিজেকে গড়ছেন, এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে সালমান খানের অনুকরণ করে নেটদুনিয়ার হাসির খোরাক হয়ে উঠা তার পক্ষে কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।
তবে এটাও ঠিক, যতই সমালোচনা আসুক, জায়েদ খান থেমে থাকার পাত্র নন—তিনি চেষ্টা করছেন, এবং নিজের জায়গা নতুনভাবে গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন।
শুধু সময় বলবে, তিনি আদৌ ‘ঢালিউডের সালমান খান’ হয়ে উঠতে পারবেন কিনা, নাকি থাকবেন কেবল ‘গুলিস্তানের ভাইজান’ হিসেবেই।
বাংলাবার্তা/এমএইচ