
ছবি: সংগৃহীত
এবারের ঈদুল ফিতরে মুক্তিপ্রাপ্ত ছয়টি সিনেমার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও প্রশংসিত চলচ্চিত্রগুলোর একটি নিঃসন্দেহে ‘দাগি’। থ্রিলার ও রোমান্টিক আবহে নির্মিত এই সিনেমাটির গল্পে উঠে এসেছে ভালোবাসা, সম্পর্কের ভাঙন, ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল এবং আত্মশুদ্ধির এক প্রগাঢ় ও আবেগঘন উপস্থাপন। বিখ্যাত নির্মাতা শিহাব শাহীন পরিচালিত ‘দাগি’ মূলত প্রেমের গল্প নয়— এটি একটি গভীর অভিজ্ঞতা, যা দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে নিঃশব্দে, ধাক্কা দিয়েছে আবেগে।
সিনেমাটির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন টেলিভিশন ও সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশো। যিনি এর আগে ছোটপর্দায় বহুবার নিজের অভিনয় দক্ষতায় মুগ্ধ করলেও ‘দাগি’ সিনেমার মাধ্যমে বড়পর্দায় নিজের অবস্থান যেন পোক্ত করে নিয়েছেন। নিশোর ভক্তকুল, সিনেমাপ্রেমী দর্শক, এবং সহকর্মীরা বলছেন— এটি নিঃসন্দেহে তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা কাজ। শিহাব শাহীনের পরিচালনায় তৈরি এই সিনেমা একাধারে বুদ্ধিদীপ্ত, আবেগঘন এবং দারুণ গতিময় একটি অভিজ্ঞতা, যা সিনেমা হলে গিয়ে না দেখলে বোঝা যায় না।
এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলেন ছোট ও বড় পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। সম্প্রতি সিনেমাটি দেখতে গিয়ে তিনি সামাজিক মাধ্যমে তার মুগ্ধতা, অনুভব এবং ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে তার দীর্ঘ পোস্টে উঠে এসেছে সিনেমাটির প্রতি এক গভীর আবেগ, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার প্রতিফলন।
মেহজাবীন লেখেন— ‘দাগি’ শুধু একটি সিনেমা নয়; এটি একটি অভিজ্ঞতা। এটি এমন এক ধরনের সিনেমা, যা আপনাকে গল্প বলার গুরুত্বকে নতুনভাবে উপলব্ধি করাবে। এতে রয়েছে শক্তিশালী প্লট, জটিল কিন্তু বাস্তবধর্মী চরিত্র এবং দুর্দান্ত অভিনয়। যারা সত্যিকারের আবেগভরা গল্প ভালোবাসেন, তাদের অবশ্যই হলে গিয়ে এই সিনেমা দেখা উচিত।
তিনি আরও লেখেন— ‘পুরো টিমকে অনেক অভিনন্দন। আপনারা সত্যিই বিশেষ কিছু তৈরি করেছেন। এই সিনেমা শুধু চোখে নয়, হৃদয়ে ছাপ ফেলে। প্রতিটি দৃশ্য, সংলাপ ও পারফরম্যান্স এতটাই বাস্তব ও আবেগময় যে, তা দর্শককে মুহূর্তেই গল্পের ভেতরে নিয়ে যায়।’
সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্র নিশান, যেটিতে অভিনয় করেছেন আফরান নিশো, সে সম্পর্কে মেহজাবীনের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। তিনি লিখেছেন— ‘নিশো ভাইয়া সবসময়ই দুর্দান্ত, কিন্তু এই সিনেমায় তিনি একেবারে অন্য লেভেলের পারফরম্যান্স দিয়েছেন। তিনি শুধু অভিনয় করেননি, চরিত্রে ঢুকে গেছেন। নিশানের যন্ত্রণা, অসহায়ত্ব, অভিমান— সবই এত বাস্তবভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে, দর্শক হিসেবে আমি নিজেও বারবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছি। তার এই রূপান্তর দেখে আমি সত্যিই গর্বিত।’
এছাড়াও তিনি প্রশংসা করেছেন সিনেমার কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র তমা মির্জাকে, যিনি তার নীরব শক্তি ও সাবলীল অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করেছেন। মেহজাবীন বলেন— ‘তমার উপস্থিতি প্রতিটি দৃশ্যকে ভারি করে তুলেছে। তার অভিব্যক্তি, সংলাপ এবং আবেগ প্রকাশের পদ্ধতি অত্যন্ত সাবলীল, অথচ গভীর।’
তরুণ ও প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেত্রী সুনেরাহর অভিনয় প্রসঙ্গেও মেহজাবীনের প্রশংসা ছিল অকপট। তিনি লেখেন— ‘সিনেমার ভেতরে যেন এক তাজা বাতাসের শ্বাস নিয়ে আসে সুনেরাহর উপস্থিতি। সে অনায়াসে মনোমুগ্ধকর। তার চরিত্রের প্রতি কৌতূহল জাগে, যা তাকে আলাদা করে তোলে।’
সবশেষে, ‘দাগি’র নির্মাতা শিহাব শাহীন সম্পর্কে মেহজাবীন লিখেছেন— ‘তিনি কেবল একজন পরিচালক নন, একজন দক্ষ গল্পকারও। গল্প বলার যে গুন, গতি ও আবেগের নির্ভুল মিশ্রণ, তা ‘দাগি’র মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন। সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যে তার মুন্সিয়ানা পরিপূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।’
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের ব্যাপক সাড়া ফেলছে ‘দাগি’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সিনেমাটি নিয়ে চলছে উচ্ছ্বসিত আলোচনা। সমালোচক ও দর্শকরা বলছেন— এই সিনেমা বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে এসেছে। অভিনয়, গল্প এবং নির্মাণ— প্রতিটি দিক থেকেই ‘দাগি’ হয়ে উঠেছে এই ঈদের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র, যা শুধু বিনোদন নয়— এক অনন্য অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি।
‘দাগি’ দেখার পর অনেক দর্শক যেমন কেঁদেছেন, তেমনি অনেকে থমকে গেছেন নিজের জীবনের ভুল সিদ্ধান্ত ও সম্পর্কের অব্যক্ত বেদনার কথা মনে করে। এটি এমন এক সিনেমা, যা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও থেকে যায় দর্শকের মনে, দীর্ঘক্ষণ ধরে। ঠিক যেমনটা বলেছেন মেহজাবীন— ‘এটি শুধু একটি সিনেমা নয়; এটি একটি অনুভূতি, একটি অভিজ্ঞতা।’
বাংলাবার্তা/এমএইচ