
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি আবারও অকুণ্ঠ সমর্থন জানালেন বিশ্বখ্যাত হলিউড অভিনেত্রী ও জাতিসংঘের সাবেক শুভেচ্ছাদূত অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। দীর্ঘদিন ধরেই যুদ্ধপীড়িত জনগণের পাশে থাকা এই অভিনেত্রী গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন নিয়ে এবার আরও একবার বিশ্ব বিবেককে নাড়া দেওয়ার মতো বার্তা দিয়েছেন।
স্থানীয় সময় শনিবার (১৯ এপ্রিল) অ্যাঞ্জেলিনা জোলি তাঁর ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় নিয়ে আন্তর্জাতিক চিকিৎসাসেবামূলক সংস্থা ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস’ (MSF)-এর একটি প্রতিবেদন শেয়ার করেন। তুরস্কভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর খবরে বলা হয়েছে, জোলির এই পোস্ট গাজাবাসীর প্রতি তার সহমর্মিতা এবং ইসরায়েলের আগ্রাসনমূলক নীতির বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জোলি শেয়ার করা পোস্টে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, “ইসরায়েলি বাহিনী যখন আকাশপথ, স্থলপথ এবং সমুদ্রপথে গাজায় তাদের সামরিক অভিযান নতুন করে শুরু ও সম্প্রসারিত করছে, তখন প্যালেস্টিনীয়দের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি এবং মানবিক সহায়তার প্রবাহে ইচ্ছাকৃত বাধা দিয়ে তাদের জীবনব্যবস্থা পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।”
এই বক্তব্যে মানবিক সংকটের গভীরতাকে নতুন করে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছেন জোলি। পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়, “গাজায় ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলা মানবিক সহায়তাকারী দল, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে উঠেছে। তাদের জীবন এখন চরম অনিরাপদ, সহায়তা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে, ফলে ক্ষুধা ও রোগে মারা যাচ্ছে হাজারো মানুষ।”
যুদ্ধবিরোধী অবস্থানে জোলি: কয়েক মাস ধরে সরব
গাজায় হামলা শুরুর পর থেকেই ইসরায়েলের সামরিক তৎপরতার কড়া সমালোচনায় মুখর জোলি। গত বছরের অক্টোবর থেকেই তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিতভাবে গাজায় শিশু হত্যা, চিকিৎসাসেবা ভেঙে পড়া, পানির সংকট ও নিরাপত্তাহীনতার ছবি ও তথ্য শেয়ার করে আসছেন। তিনি একাধিকবার জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোকে তীব্র ভাষায় দায়ী করে বলেছেন, “এই নীরবতা, এই সহানুভূতিহীনতা কোনোভাবেই মানবিক নয়।”
তিনি তাঁর এক পোস্টে লিখেছিলেন, “বিশ্ব যখন অবলোকন করছে, তখন এক নিরস্ত্র জনগোষ্ঠীর ওপর পদ্ধতিগত ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। শিশুরা খুন হচ্ছে, হাসপাতাল ধ্বংস করা হচ্ছে, খাবার ও পানির সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব কীভাবে আত্মরক্ষার যুক্তিতে বৈধতা পায়?”
জোলির অবস্থান আন্তর্জাতিক মানবতা চর্চার বার্তা
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি শুধু একজন অভিনেত্রী নন, বরং গত দুই দশক ধরে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর হয়ে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ ও সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পক্ষে সরব ছিলেন। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইয়েমেন—যেখানেই মানবিক সংকট, সেখানেই উপস্থিতি ছিল তাঁর। গাজা সংকটেও তিনি ব্যতিক্রম নন।
বিশ্লেষকদের মতে, জোলির মতো তারকা যখন স্পষ্টভাবে একটি যুদ্ধ বা নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তখন সেটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও চাপ তৈরি করে। পশ্চিমা বিশ্বের জনমত নড়েচড়ে বসে। বিশেষ করে মার্কিন ও ইউরোপীয় দর্শকদের মধ্যে এর প্রভাব পড়ে ব্যাপকভাবে, কারণ তারা তার ভক্ত।
পশ্চিমা মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
জোলির মতামত আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে এই কারণে যে, পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমে গাজা সংকটকে অনেক সময় ‘দ্বিপক্ষীয় সংঘর্ষ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। সেখানে একজন প্রভাবশালী পশ্চিমা সেলিব্রেটি যখন বলেন, “এটি একপাক্ষিক গণহত্যা,” তখন গণমাধ্যমের পক্ষপাতী কাঠামোও প্রশ্নের মুখে পড়ে।
জোলির পোস্টটিও ছিল এক ধরনের প্রতিবাদী ভাষ্য। তিনি স্পষ্ট করে জানান, “ইসরায়েল রাষ্ট্র হিসেবে মানবিক আইন লঙ্ঘন করছে। যুদ্ধের নিয়মনীতি লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত, অথচ দুনিয়া চুপ।” তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান, যাতে গাজার নির্যাতিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো হয়।
মানবতা বনাম রাজনীতি
গাজা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অ্যাঞ্জেলিনা জোলির অবস্থান আবারও মনে করিয়ে দেয়, মানবতা কোনো রাজনৈতিক সীমান্ত মানে না। বিশ্বের অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতা যখন নীরব, তখন একজন শিল্পী হয়ে উঠতে পারেন সবচেয়ে সাহসী কণ্ঠস্বর।
তার এই অব্যাহত অবস্থান গাজাবাসীর ন্যায্য অধিকারের প্রতি এক মানবিক সমর্থন, যা সারা দুনিয়ার বিবেকবান মানুষকে নাড়া দিচ্ছে। অনেকেই বলছেন, জোলির মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের সরব উপস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলে গাজার বিরুদ্ধে চলমান নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
যুদ্ধ যখন শিশুদের হত্যা করে, তখন নীরব থাকা আর নির্যাতনে অংশ নেওয়ার মধ্যে পার্থক্য থাকে না—জোলির প্রতিবাদ যেন সেই ন্যায়ের কণ্ঠস্বর।
বাংলাবার্তা/এমএইচ