
ছবি: সংগৃহীত
এক সময়ের ব্যস্ততম ছোট পর্দার অভিনেত্রী পিয়া বিপাশা হঠাৎ করেই হারিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের শোবিজ দুনিয়া থেকে। দীর্ঘ সময় তাকে দেখা যায়নি কোনো নাটক কিংবা বিজ্ঞাপনে। ভক্ত-দর্শকের মনে তখন একটাই প্রশ্ন—কোথায় গেলেন পিয়া বিপাশা? অবশেষে জানা গেল, পিয়া পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে, আর সেখানেই গড়ে তুলেছেন নিজের নতুন জীবন। আজ তিনি একজন প্রবাসী বাংলাদেশি নারী, একজন মা, একজন মডেল এবং একজন প্রতিযোগী আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য আসরে।
২০১২ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মিডিয়ায় পা রাখেন পিয়া বিপাশা। শুরুটা ছিল একটু ব্যতিক্রমী। প্রতিযোগিতায় সেরা দশে পৌঁছালেও হঠাৎ করে ক্যাম্পেইন বুথ থেকে বেরিয়ে গিয়ে আলোচনার জন্ম দেন। এরপর বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজের মাধ্যমে নিজেকে পরিচিত করে তুলতে থাকেন।
পরের বছর, ২০১৩ সালে তাহসান খানের বিপরীতে ‘দ্বিতীয় মাত্রা’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নাটকে অভিষেক ঘটে তার। এই নাটকের মধ্য দিয়েই তার প্রতিভার ঝলক নজর কাড়ে দর্শকদের। এরপর একে একে আফরান নিশো, অপূর্ব, রিয়াজ, আহমেদ রুবেল, আফজাল হোসেন ও চঞ্চল চৌধুরীর মতো নামজাদা অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় করে জায়গা করে নেন ছোট পর্দার প্রথম সারির অভিনেত্রীদের তালিকায়।
শুধু নাটকেই নয়, পিয়া সিনেমাতেও পা রাখেন। ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্র ‘রুদ্র দ্য গ্যাংস্টার’-এ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে তার। এবিএম সুমনের বিপরীতে অভিনয় করা এ ছবিটি পরিচালনা করেন সায়েম জাফর ইমামি। এর পর আরও বেশ কয়েকটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হলেও অজানা কারণে কিছু ছবি থেকে বাদ পড়েন কিংবা নিজেই সরে আসেন।
পিয়া বিপাশার ব্যক্তিগত জীবনও ছিল আলোচিত। একটি বিয়ে হয়েছিল তার, সেই সংসার থেকে তার একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। কিন্তু সে সংসারে ছন্দপতন ঘটে, বিচ্ছেদ ঘটে স্বামীর সঙ্গে। এরপর কিছু সময় বিরতি নিয়ে আবার প্রেমে জড়ান। ঢাকার একজন যুবকের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, এমনকি বিয়ের পরিকল্পনাও ছিল। তবে মতের অমিলের কারণে সেই সম্পর্কও বেশিদিন টেকেনি। গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পিয়া বলেছিলেন, “হ্যাঁ, একজনের সঙ্গে প্রেম ছিল। কিন্তু তার সঙ্গে মতের মিল হয়নি, তাই প্রেম টেকেনি। বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকেও সরে এসেছি।”
সেই সম্পর্কের অবসানের পর, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক রিজবেইয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় পিয়া বিপাশার। তাদের পরিচয়টি হয় পিয়ার ভগ্নিপতির মাধ্যমে, যিনি নিজেও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন এবং রিজবেইয়ের বন্ধু ছিলেন। চার মাসের পরিচয়ের পর ২০১৯ সালের ২১ জুলাই পারিবারিকভাবে তাদের বাগদান সম্পন্ন হয়। এরপর বিয়ে এবং স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বসবাস শুরু করেন পিয়া বিপাশা।
নিউ ইয়র্কে গিয়ে শুধু পরিবার নিয়েই ব্যস্ত থাকেননি তিনি। নিজেকে নতুনভাবে গড়ার মিশনে নেমেছেন। শারীরিক গঠন থেকে শুরু করে লাইফস্টাইল—সব কিছুতেই এসেছে আমূল পরিবর্তন। নিজেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে প্রস্তুত করেছেন নতুনভাবে।
যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখার কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি অংশ নেন আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা ‘মিসেস ওয়ার্ল্ড’-এ। তিনি হচ্ছেন দ্বিতীয় বাঙালি নারী, যিনি এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি সবাই তার পাশে ছিলেন এই যাত্রায়। প্রতিযোগিতার জন্য ওজন কমানো থেকে শুরু করে পুরো লাইফস্টাইল পাল্টে ফেলেন তিনি। এই প্রতিযোগিতা ছিল তার জীবনের এক অনন্য মাইলফলক।
বর্তমানে পিয়া বিপাশা সামাজিক মাধ্যমে বেশ সক্রিয়। ইনস্টাগ্রামে একের পর এক ছবি পোস্ট করে দারুণ আলোচনায় থাকেন। তার লাইফস্টাইল, ফ্যাশন স্টেটমেন্ট, ব্যক্তিগত জীবনের ঝলক—সব কিছুই নেটিজেনদের নজরে আসে নিয়মিতভাবে। একসময় যিনি ছিলেন ছোট পর্দার নিয়মিত মুখ, আজ তিনি এক প্রবাসী বাংলাদেশি নারী হিসেবে নিজের পরিচিতি গড়ে তুলেছেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে।
পিয়া বিপাশার এই রূপান্তর শুধু পেশাগত দিক থেকেই নয়, ব্যক্তিগত জীবন ও আত্মপরিচয়েরও এক নতুন সংজ্ঞা বহন করে। নিউ ইয়র্কে তার নতুন জীবন, নতুন ভালোবাসা, এবং নতুন স্বপ্ন—সব কিছু মিলে তার যাত্রা হয়ে উঠেছে অনুপ্রেরণামূলক এক গল্প।
চোখের সামনে হারিয়ে যাওয়া সেই পিয়া বিপাশা আজও আছেন, শুধু একটু ভিন্ন আকাশের নিচে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ