
ছবি: সংগৃহীত
দেশে বক্স অফিস মাতিয়ে ঈদের আলোচিত চলচ্চিত্র ‘জংলি’ এবার যাত্রা শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দিকে। রোমাঞ্চ, আবেগ, পারিবারিক টানাপোড়েন আর অ্যাকশনের অনবদ্য মিশেলে নির্মিত এই সিনেমাটি ২৫ এপ্রিল থেকে একযোগে মুক্তি পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের ৪০টি শহরের থিয়েটারে।
এটি বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জন্য নিঃসন্দেহে এক অনন্য অর্জন, যেখানে একসঙ্গে এতগুলো শহরে একটি দেশীয় সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে—তা খুবই বিরল ঘটনা। এই আন্তর্জাতিক যাত্রা প্রমাণ করে, দেশীয় চলচ্চিত্র এখন সীমান্ত পেরিয়ে পৌঁছাতে পারছে বিশ্বজনীন দর্শকের হৃদয়ে।
চলতি বছরের রোজার ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘জংলি’ দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। বিশেষ করে ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্স, যমুনা ব্লকবাস্টারসহ দেশের প্রধান প্রেক্ষাগৃহগুলোতে টিকিট পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ঈদের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সিনেমাটি বাণিজ্যিকভাবে সফলতার পথ ধরে এগিয়ে যায়। দেশজুড়ে হাজার হাজার দর্শকের ভালোবাসা অর্জন করে ‘জংলি’ খুব দ্রুতই ঈদের সেরা সিনেমার তকমা পায়।
দর্শক প্রশংসা করেছেন সিনেমার গল্প, আবেগময় চরিত্রচিত্রণ, শিশু শিল্পী নৈঋতার মন ছুঁয়ে যাওয়া অভিনয় এবং সিয়াম আহমেদের আগ্রাসী, তবু মানবিক চরিত্রকে। এই সাফল্যের জোয়ারে ভাসতেই এবার সিনেমাটি আন্তর্জাতিক বাজারে মুক্তি পাচ্ছে।
‘জংলি’র আন্তর্জাতিক পরিবেশনার দায়িত্বে রয়েছে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মোট ৪০টি শহরের থিয়েটার ইতোমধ্যে তালিকাভুক্ত হয়েছে, যেখানে চলবে ছবিটি।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম সপ্তাহেই সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে ২৮টি থিয়েটারে। এর মধ্যে রয়েছে নামকরা মাল্টিপ্লেক্স চেইন AMC-এর ১২টি, Regal Cinemas-এর ১৪টি ও Showcase Cinemas-এর ২টি শাখা।
প্রদর্শনীর তালিকায় রয়েছে নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলেস, হিউস্টন, ডালাস, ফিলাডেলফিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, আটলান্টা, বাফেলো, ডেট্রয়েট ও ক্যানসাস সিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর।
কানাডায় ছবিটি চলবে ৫টি সিনেপ্লেক্স থিয়েটারে। এর মধ্যে রয়েছে টরন্টো, মন্ট্রিয়াল, অটোয়া, ভ্যানকুভার ও উইন্ডসরের মতো বড় শহর।
যুক্তরাজ্যে ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে জনপ্রিয় চেইন Cineworld-এর ৭টি শাখায়। শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে লন্ডন, বার্মিংহাম, ওয়েম্বলি, লুটন ও ফেলথাম।
যুক্তরাজ্যে পরিবেশনায় স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর সঙ্গে অংশীদার হয়েছে রিভেরি ফিল্মস।
ছবিটির মূল চরিত্রে রয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা সিয়াম আহমেদ। এক সাহসী, নিবেদিতপ্রাণ ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করে তিনি দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন শিশু শিল্পী নৈঋতা, যার অভিনয় সিনেমার আবেগময়তা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আছেন চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী, যিনি তার চরিত্রে নতুন এক পরিপক্বতা এনে দিয়েছেন। এছাড়া একসময়ের জনপ্রিয় শিশুশিল্পী প্রার্থনা ফারদিন দীঘি-ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
ছবিটির সংগীত পরিচালনায় রয়েছেন প্রিন্স মাহমুদ, যার গানে সিনেমার আবেগ আরও গভীর হয়েছে। প্রতিটি গান দর্শকের মধ্যে আলাদা রকম অনুভূতি ছড়িয়ে দিয়েছে। পরিচালনায় রয়েছেন তরুণ নির্মাতা এম রাহিম, যিনি এর আগেও প্রমাণ করেছেন যে, তিনি নতুন ধারার গল্প বলার ক্ষেত্রে কতটা সাহসী এবং দক্ষ।
‘জংলি’র এই আন্তর্জাতিক মুক্তি কেবল একটি সিনেমার সীমিত সাফল্য নয়, বরং এটি বাংলাদেশি সিনেমার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেওয়ার ইঙ্গিত। বিদেশে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য এটি এক রকমের আবেগময় উৎসব, যেখানে নিজের দেশের একটি সিনেমা বড় পর্দায় দেখে তারা যেমন গর্বিত হন, তেমনি নিজ সংস্কৃতির সঙ্গে সংযোগও আরও গভীর হয়।
সিয়াম আহমেদ নিজেও এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এই সিনেমা কেবল আমার ক্যারিয়ারের নয়, বাংলাদেশের সিনেমার এক নতুন উত্থানের প্রতীক হতে পারে।”
‘জংলি’র আন্তর্জাতিক মুক্তি নিঃসন্দেহে দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য এক নতুন মাইলফলক। বিদেশের ৪০টি শহরে সিনেমাটির প্রদর্শনী প্রমাণ করে, ভালো গল্প, শক্তিশালী অভিনয় ও মানসম্মত নির্মাণ থাকলে বাংলা সিনেমাও বিশ্ববাজারে জায়গা করে নিতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ