
ছবি: সংগৃহীত
চলতি বছরের ঈদুল ফিতরে মুক্তিপ্রাপ্ত তিনটি আলোচিত সিনেমা ‘বরবাদ’, ‘দাগি’ এবং ‘জংলি’ এখনো দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। ঈদ পার করে এক মাস হয়ে গেলেও দর্শক চাহিদা ও বক্স অফিস সংগ্রহের দিক থেকে এই সিনেমাগুলোর অবস্থান বেশ উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে বরবাদ সিনেমাটি এখন পর্যন্ত ঈদের পরবর্তী সময়েও দর্শকদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করতে পেরেছে, যা দেশের চলমান বাণিজ্যিক সিনেমার জন্য একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এবারের ঈদের সিনেমাগুলোর টিকিট বিক্রির মোট অঙ্কও নেহাত কম নয়। একাধিক প্রেক্ষাগৃহ ও মাল্টিপ্লেক্সের হিসাব অনুযায়ী, ঈদের সিনেমাগুলো মিলিয়ে প্রায় ৭০ কোটি টাকার কাছাকাছি গ্রস কালেকশন হয়েছে। এই সংখ্যা দেশের সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র বাজারের জন্য বেশ আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সবচেয়ে এগিয়ে ‘বরবাদ’
‘বরবাদ’ সিনেমাটি এবার ঈদের বক্স অফিসে সবচেয়ে বেশি সফলতা পেয়েছে। রিয়েল এনার্জি প্রডাকশনের ব্যানারে নির্মিত এই সিনেমায় শাকিব খান অভিনয় করেছেন প্রধান চরিত্রে। সিনেমাটি মুক্তির পর থেকেই দর্শকদের ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
প্রযোজক শাহরিন আক্তার সুমি গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, ‘বরবাদ’ মুক্তির ২৫ দিন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সিঙ্গেল স্ক্রিন ও মাল্টিপ্লেক্স মিলিয়ে ৭২টি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়েছে এবং এ সময় পর্যন্ত সিনেমাটির মোট গ্রস কালেকশন দাঁড়িয়েছে ৬২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
শুধু মাল্টিপ্লেক্স নয়, দেশের নানা প্রান্তের একক প্রেক্ষাগৃহেও ‘বরবাদ’ দারুণ সাড়া ফেলেছে। ঈদের পরবর্তী সপ্তাহগুলোতেও সিনেমাটি প্রতিদিন নতুন নতুন শো যুক্ত করেছে। চতুর্থ সপ্তাহে স্টার সিনেপ্লেক্সের সাতটি ব্রাঞ্চে ‘বরবাদ’ প্রতিদিন ৩৯টি শো পেয়েছে, যা তৃতীয় সপ্তাহে ছিল ৩৫টি শো। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, দর্শক আগ্রহ কমেনি বরং কোনো কোনো অঞ্চলে বেড়েছে।
দাগির ধীর কিন্তু স্থিতিশীল যাত্রা
এবারের ঈদে আলোচিত অন্য একটি সিনেমা ছিল আফরান নিশো অভিনীত ‘দাগি’। এই সিনেমাটিও প্রশংসা পেয়েছে দর্শক ও সমালোচক মহলে। যদিও ‘বরবাদ’-এর তুলনায় বক্স অফিস সংগ্রহ কিছুটা কম, তবে ‘দাগি’ও নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে।
সিনেমাটির অন্যতম প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানান, ‘দাগি’ এখন পর্যন্ত ৭ কোটি টাকার বেশি গ্রস কালেকশন করেছে।
চতুর্থ সপ্তাহে স্টার সিনেপ্লেক্সের ছয়টি ব্রাঞ্চে সিনেমাটি প্রদর্শিত হচ্ছে এবং প্রতিদিন দুইটি শো পাচ্ছে। যদিও শো সংখ্যা তুলনামূলক কম, তবে ‘দাগি’-র ক্ষেত্রে দর্শকদের আগ্রহ এখনো পুরোপুরি হারায়নি। বিশেষ করে শহরাঞ্চলের তরুণ দর্শকদের মধ্যে সিনেমাটি দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
সীমিত সংগ্রহেও নজর কেড়েছে ‘জংলি’
ঈদের তৃতীয় আলোচিত সিনেমা ছিল সিয়াম আহমেদ অভিনীত ‘জংলি’। প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং অ্যাকশনধর্মী গল্পের কারণে ভিন্নধরনের একটি ফ্লেভার এনেছিল সিনেমাটি। তবে বক্স অফিসে ‘জংলি’-র সংগ্রহ তুলনামূলক কম হয়েছে।
পরিচালক এম রাহিম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, মুক্তির ২৬ দিন শেষে ‘জংলি’ সিনেমার মাল্টিপ্লেক্স গ্রস কালেকশন ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
চতুর্থ সপ্তাহে স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘জংলি’ প্রতিদিন ২৩টি শো পাচ্ছে। শো সংখ্যা এবং দর্শকসংখ্যা কিছুটা কম হলেও সিনেমাটি বিশেষ কিছু শ্রেণির দর্শকের মধ্যে নিজের স্থান করে নিয়েছে। পরিবেশক ও সিনেমা বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘জংলি’ মূলত শহরাঞ্চলের নির্দিষ্ট দর্শক গোষ্ঠীর মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, যারা অ্যাকশন ও ভিন্নধর্মী গল্প পছন্দ করেন।
টিকিট বিক্রির সামগ্রিক চিত্র
ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘বরবাদ’ যেমন সর্বোচ্চ সংগ্রহ করেছে, তেমনি সামগ্রিকভাবে এই তিনটি সিনেমার সম্মিলিত গ্রস কালেকশন প্রায় ৭২ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
এমন বড় অঙ্কের সংগ্রহ দীর্ঘদিন পর দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য এক ধরনের পুনর্জাগরণের ইঙ্গিত দিয়েছে। বিশেষ করে ঈদের মতো বিশেষ সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো যদি ভালো ব্যবসা করে, তবে তা পুরো ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক হয়ে দাঁড়ায়।
চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হলমুখী দর্শক কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই ঈদের সিনেমাগুলোর সাফল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। যদি ধারাবাহিকভাবে মানসম্পন্ন সিনেমা নির্মাণ করা হয়, তবে ভবিষ্যতে দেশের সিনেমা বাজার আরও বড় পরিসরে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
সামনে কী অপেক্ষা করছে?
চতুর্থ সপ্তাহে এসে যখন সিনেমাগুলোর শো সংখ্যা ও দর্শক আগ্রহের পরিবর্তন হচ্ছে, তখন একদিকে যেমন ‘বরবাদ’ দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে, তেমনি ‘দাগি’ ও ‘জংলি’ নিজেদের নির্দিষ্ট দর্শকশ্রেণীর মধ্যে নিরবিচারে এগিয়ে যাচ্ছে।
আশা করা হচ্ছে, ঈদের পরবর্তী দুই-তিন সপ্তাহেও বিশেষ করে ‘বরবাদ’ ও ‘দাগি’ ভালো সংগ্রহ অব্যাহত রাখতে পারবে। অন্যদিকে ‘জংলি’ও সীমিত আকারে হলেও তার দর্শক ধরে রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিনেমা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে আসন্ন কোরবানির ঈদেও দেশীয় সিনেমাগুলোতে আরও বড় রকমের উত্তাপ দেখা যেতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ