প্রতীকী ছবি
বর্তমান সময়ে মানুষের মৃত্যুর প্রধান এবং অন্যতম কারণ হচ্ছে হার্ট ডিজিজ, মোট মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যক মৃত্যু হার্ট ডিজিজের কারণেই হয়ে থাকে। হার্ট ডিজিজ সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায়, মানে যাদের বয়স ৫০ বছর অতিক্রম করেছে, তাদেরই সবচেয়ে বেশি হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। তবে ৫০ বছরের চেয়ে অল্প বয়সে যে হার্ট ডিজিজ একেবারেই হয় না তা কিন্তু নয়, তবে এ ক্ষেত্রে অন্যান্য অসুস্থতার চেয়ে হার্ট ডিজিজ হওয়ার প্রবণতা অনেকাংশেই বেশ কম হতে দেখা যায়। এ বয়সের ব্যক্তিদের মধ্যে জন্মগত হার্ট ডিজিজ, বাতজ্বরজনিত হার্ট ডিজিজ, হার্টের ভাল্বের সমস্যা, হার্টের বিভিন্ন অংশের প্রদাহ এবং জীবাণু সংক্রমণ বেশি পরিলক্ষিত হয় এবং বিশেষ ক্ষেত্রে মাদক আসক্ততাজনিত হার্টের অসুস্থতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
যারা বয়স্ক ব্যক্তি তাদের ক্ষেত্রে হার্টের অসুস্থতার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই হার্ট ব্লকজনিত অসুস্থতা দেখা দেয়। হার্ট ব্লকের কারণগুলোর মধ্যে বয়স বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান ও মদ্যপান, বংশগত প্রবণতা, রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল, কায়িক শ্রম বিবর্জিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদিকে অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মনে করুন আপনি একজন সুস্থ স্বাভাবিক ব্যক্তি, আপনার জীবনে সব ধরনের কর্মকান্ড আপনি সঠিকভাবে পরিচালনা করে যাচ্ছেন। হয়তো আপনার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান ইত্যাদি কোনো সমস্যাই আপনার শরীরে বিদ্যমান নেই অথবা আছে। আপনি হঠাৎ কোনো কারণে অসুস্থতা বোধ করলেন এবং হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন দেখা দিল। চিকিৎসকগণ প্রয়োজনীয়তা বোধ করে আপনাকে এনজিওগ্রাম করতে দিল। এনজিওগ্রাম করে আপনার হার্টে এক বা একাধিক বড় (তাৎপর্যপূর্ণ) ব্লক ধরা পড়ল। হঠাৎ একজন সুস্থ মানুষ জানতে পারল যে তার হার্টে ব্লক বিদ্যমান। এ ক্ষেত্রে অনেক রোগীই এ অবস্থাকে মেনে নিতে পারে না অথবা মেনে নিতে কষ্ট হয়। এ ধরনের অবস্থায় ব্যক্তি নিজে ও পারিবার এবং আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যেও এক ধরনের আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। মানুষ কী করবে, কী করবে না এটা ভেবে দ্বিধাগ্রস্ততার মধ্যে পড়ে। তার পরবর্তী জীবনের হিসাব-নিকাশ, ধ্যান ধারণা ও চিন্তা চেতনার অনেক পরিবর্তন হয়ে যায়। এক কথায় বলতে গেলে হঠাৎ হার্ট ব্লক ধরা পড়লে মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। মানুষ ভাবতে শুরু করে যে তার জীবনে একটা বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে। ব্যক্তি তার জীবন নিয়ে শঙ্কায় পতিত হন। বৈজ্ঞানিক (চিকিৎসা শাস্ত্র) দৃষ্টিকোণ থেকে যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে উক্ত অবস্থাকে কী কী উপায়ে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে, যেমন- ব্যক্তি পূর্ব থেকেই হার্ট ব্লকে আক্রান্ত ছিল। হার্ট ব্লক এমনই এক ধরনের অসুস্থতা যা খুবই ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। কারও কারও হার্ট ব্লক সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে বড় (তাৎপর্যপূর্ণ) ধরনের হার্ট ব্লক হতে ২০ থেকে ৩০ বছর সময় লেগে যেতে পারে। অন্যভাবে বলতে গেলে আজকে যে হার্ট ব্লক ধরা পড়ল তার সূত্রপাত কিন্তু আরও ২০ থেকে ৩০ বছর আগে শুরু হয়েছিল। যেহেতু হার্ট ব্লক খুব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় তাই আজকে যে হার্ট ব্লক ধরা পড়ল তা হয়তো ১ বছর আগে ওই ব্যক্তির শরীরে বিদ্যমান ছিল, যার তীব্রতা হয়তো একটু কম ছিল। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা, অস্থিরতার ফলে হার্ট ব্লকের লক্ষণগুলো আত্মপ্রকাশ ঘটে যা আগে পরিলক্ষিত হয়নি। তবে বিভিন্নজনের মধ্যে বিভিন্নভাবে তা পরিস্ফুটিত হয় যা চিকিৎসকরা খুব সহজেই শনাক্ত করতে পারেন। অধিকাংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে আমরা দেখে থাকি যে, তিনি যেহেতু ইতোপূর্বে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে জীবনধারণ করে আসছিলেন তাই তিনি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। তার শরীরে ইতোপূর্বে কোনো ধরনের হার্টে ব্লকের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়নি। সুতরাং হার্ট ব্লক নিয়ে খুব বেশি বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নাই। যেহেতু আজকে ধরা পড়া ব্লকটি অনেক আগে থেকেই উক্ত ব্যক্তির শরীরে বিদ্যমান ছিল যা বর্তমানে এনজিওগ্রামের মাধ্যমে ধরা পড়ল। তাই তাড়াহুড়া করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞানের আওতাধীন চিকিৎসা নেওয়াই উত্তম। হার্ট ব্লক ধরা পড়লে ব্যাকুল না হয়ে, ভীতসন্ত্রস্ত না হয়ে, ধীরেসুস্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা গ্রহণ করে সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন।
লেখক: চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।
বাংলাবার্তা/এমপি