ছবি : সংগৃহীত
ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে দিন দিন। বিভিন্ন সংস্থা ও সরকার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়কে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিলেও ডেঙ্গুর বাড়ার কারণ নাগরিকদের অসচেতনতা। ফলে সরকারের আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডেঙ্গু। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণকে একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছেন তারা। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী দিয়ে মশার ওষুধ ছিটানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মতো নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ডেঙ্গু থেকে নাগরিকদের রক্ষায় সরকার জনসচেতনতা সৃষ্টি, মশার প্রজননস্থল বিনষ্ট করা, পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা এবং লার্ভা ও মশা নিধন ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং ডেঙ্গু মোকাবিলায় মশক নিধন অভিযান যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করছে।
এসব কার্যক্রম সমন্বয় ও নিবিড় তদারকির জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ ১০টি কমিটি গঠন করেছে। ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করতে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ডেঙ্গু রোগী ও মারা যাওয়া রোগীর নামের তালিকা (ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরসহ) সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভাগুলোয় নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বের সঙ্গে দেওয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ জন্য সরকার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। জনসচেতনতা বাড়াতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খুদে বার্তা ও গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। তবুও অসচেনতনা ও সাধারণ মানুষের অসহযোগিতার কারণে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। হাসপাতালগুলোয় বেশি দেখা যাচ্ছে ঢাকার বাইরের রোগী।
এ নিয়ে এক রিটের শুনানিতে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের নেতৃত্বে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে রুলসহ এক আদেশ দিয়েছেন। আদেশে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করতে বলেছেন আদালত। পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন উচ্চ আদালত। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহিন এম রহমান জানান, ইতোমধ্যে ৩৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ৭২ হাজার ডিটেকটেড হয়েছে। এটা অফিসিয়ালি। আন-অফিসিয়ালি আরও বেশি।
আইনজীবী মাহিন বলেন, কলকাতা তাদের ডেঙ্গু সমস্যা অনেকটা মিটিয়ে ফেলেছে। মালয়েশিয়াও করেছে। এগুলো আদালতে বলেছি। এ সম্পর্কে আদালতের ভিউ হচ্ছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধের ওপর সরকারের বেশি মনোযোগ প্রয়োজন। কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে আদালত ৩০ দিন সময় দিয়েছেন। আর ৬০ দিনের মধ্যে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করতে বলেছেন। এ কমিটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
এদিকে রাজধানীর হাসপাতালগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে ঢাকার বাইরের ডেঙ্গু রোগী বেশি। যা ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনগণের অসচেতনতাই প্রমাণ করে। চলতি মাসে (নভেম্বর) ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিলেও ডেঙ্গুর বাড়ার কারণ নাগরিকদের অসচেতনতা। ফলে সরকারের আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডেঙ্গু। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। সহসাই এটি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। চলতি মাসের প্রথম ১০ দিন ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু এ মৌসুমের যে কোনো মাসের প্রথম ১০ দিনের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাজনিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। যার পাঁচজনই ঢাকায়।
এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে ৩৬৭ জনের মৃত্যু হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ২১১ জন। এ নিয়ে চলতি বছরে হাসপাতালে ৭৪ হাজার ৮০০ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো নিয়মিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত সাতজনের মধ্যে পাঁচজনই ঢাকা বিভাগের। বাকি একজন করে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছে এক হাজার ৬১৯ ডেঙ্গু রোগী।
এ নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে ৭০ হাজার ৪৫৩ জন ছাড়পত্র পেয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে চার হাজার ৩৪৭ ডেঙ্গু রোগী। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কমবে না। তারা বলেছেন, সারা দেশে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থায় গলদ, বৃষ্টির পানি জমে থাকা, মশক নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা, স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থাসহ অন্য আরও বেশ কিছু কারণে ডেঙ্গু কমছে না।
বাংলাবার্তা/এমআর