ফটো কোলাজ: বাংলাবার্তা
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে ভয়াবহ বছর পার করেছে বাংলাদেশ। বিদায়ী ২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে লাখের বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হন। এদের মধ্যে প্রায় ৬০০ জনের প্রাণহানি ঘটে। বছরে মৃত্যুর সংখ্যায় এটি দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এত মৃত্যুর পরও সরকারের সংশ্লিষ্টরা অনেকটাই স্বস্তির ঢেকুর তুলছেন।
৬শ মৃত্যুতেও যেন অনেকটা আত্মতৃপ্তি শোনা গেল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) লাইন ডিরেক্টর ডা. মোহাম্মদ হালিমুর রশিদের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালের চেয়ে তিন ভাগের একভাগ রোগী এবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন; মৃত্যুও কমেছে।’
৬০০ মৃত্যুর সংখ্যাটি হাসপাতালভিত্তিক। ফলে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা কত সেই পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আড়াই শতক ধরে ডেঙ্গু মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ। এই সময়ে ভাইরাসটির ধরন ও প্রতিরোধে বেশ অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে। কিন্তু মশা নির্মল ও রোগী ব্যবস্থাপনায় অবহেলা রয়ে গেছে। ডেঙ্গু নির্মূল কার্যক্রমে সমন্বিত উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। মৃত্যু হলেও স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একে অপরকে ঠেলছে, কেউই দায় নিচ্ছে না। ফলে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারানোর তালিকায় বিশ্বে শীর্ষে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫৭৫ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৩ শতাংশই পুরুষ। তবে মারা গেছেন বেশি নারী। মোট মৃত্যুর ৫১ শতাংশ নারী।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, শূন্য থেকে ১৫ বছর বয়সি শিশু রয়েছ ৭০ জন, যুবক ২২১ জন, মধ্যবয়স্ক ১৭৪ জন এবং মৃতদের মধ্যে বয়স্ক পাওয়া গেছে ১০৬ জন।
এ বছর ডেঙ্গু রোগীর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি)। একই সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার রোগী।
এমন অবস্থায় সিটি করপোরেশনের মশা নির্মূল কার্যক্রম নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। তবে সমালোচনা অযৌক্তিক দাবি করে নিজেদের কার্যক্রমকে সফল দাবি করছেন ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির।
আমার দেশকে তিনি বলেন, '২০২৪ সালে যত রোগী পাওয়া গেছে তার ৮০ ভাগই ঢাকার বাইরের। আমরা ব্যর্থ হইনি, সফল হয়েছি। ফলে দক্ষিণ সিটিতে এবার রোগী ২০ ভাগে নেমেছে। আমরা মনে করি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখেছি।
তবে আগের বছরের তুলনায় গত বছর মৃত্যু তুলনামূলক কম হওয়ায় আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. গোলাম সারোয়ার। আমার দেশকে তিনি বলেন, মশার ঘনত্ব কোনো অংশে কমছে না। ভর্তির পাশাপাশি আক্রান্তের তথ্য পেলে পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ হতো না।
কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মোটামুটি প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে সেটি হয়নি। আশা করা যায় এ বছরেই দ্রুত হয়ে যাবে।’
বাংলাবার্তা/এমআর