
ছবি: সংগৃহীত
রমজান মাস এলেই ছোট-বড় সবার মাঝেই এক ভিন্নধর্মী পরিবেশ তৈরি হয়। শিশুরাও বড়দের দেখে রোজা রাখার আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে তাদের শারীরিক সক্ষমতা ও স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে অভিভাবকদের কিছু বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করা উচিত, যাতে রোজা রাখতে গিয়ে শিশুরা অসুস্থ না হয়ে পড়ে।
শিশুরা কত বছর বয়স থেকে রোজা রাখতে পারে?
সাধারণত ১০ বছর বা তার বেশি বয়সী শিশুরা রোজা রাখার জন্য শারীরিকভাবে উপযুক্ত হয়। তবে বয়সের পাশাপাশি শিশুর শারীরিক সক্ষমতা এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থার দিকেও লক্ষ্য রাখা জরুরি। ছোট বয়স থেকেই তাদের রোজার ফজিলত ও নিয়ম সম্পর্কে বোঝানো হলে ভবিষ্যতে রোজা পালন করা তাদের জন্য সহজ হবে।
শিশুদের রোজার সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার
রোদ ও অতিরিক্ত পরিশ্রম এড়িয়ে চলা: শিশুরা খেলাধুলায় বেশি সক্রিয় থাকে, যা রোজার সময় তাদের শরীরকে ক্লান্ত করে দিতে পারে। তাই দিনের বেলায় খুব বেশি খেলাধুলা না করা এবং সরাসরি রোদে না যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
পানিশূন্যতা রোধ: শিশুদের শরীরে পানির ঘাটতি সহজেই দেখা দিতে পারে। তাই ইফতার ও সেহরির মাঝে ৭-১০ গ্লাস পানি পান করানো উচিত। পানিশূন্যতার লক্ষণগুলোর মধ্যে চোখ ভেতরে ঢুকে যাওয়া, অতিরিক্ত দুর্বলতা, মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
পুষ্টিকর খাবারের নিশ্চয়তা: রোজার সময় শিশুর শরীর যাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়, সেদিকে খেয়াল রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সেহরিতে শিশুকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে, যেমন- দুধ, দই, ডিম, মাছ, মাংস, শাকসবজি ও ফল।
সঠিক পরিমাণে পানি ও তরল খাবার: ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল খাবার যেমন ফলের জুস, ডাবের পানি, ইসবগুলের শরবত ও দুধ দেওয়া উচিত।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম: শিশুদের রোজার সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে তারা ক্লান্ত হয়ে না পড়ে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে।
তৈলাক্ত খাবার পরিহার: অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ইফতারিতে পেঁয়াজি, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপি ইত্যাদি কমিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
সঠিক মাত্রায় শর্করা গ্রহণ: ভালো শর্করা জাতীয় খাবার যেমন খেজুর, আপেল, পেয়ারা, সেমাই ও পেঁপে শিশুর ইফতার ও সেহরির খাবার তালিকায় রাখা উচিত। তবে একসঙ্গে বেশি খাবার না খাইয়ে ধাপে ধাপে খাওয়ানো ভালো।
শিশুর প্রশংসা করা: শিশুকে রোজার জন্য উৎসাহ দিতে তার প্রশংসা করুন। এতে সে আরও আগ্রহী হয়ে উঠবে।
শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া: রোজার সময় শিশুর যদি কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শিশুদের রোজা পালনের অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। তবে তাদের শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পানি গ্রহণের মাধ্যমে শিশুরা সুস্থভাবে রোজা রাখতে পারবে। অভিভাবকদের উচিত শিশুদের প্রতি যত্নশীল থাকা এবং তাদের উৎসাহিত করা, যেন তারা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে আনন্দের সঙ্গে অংশ নিতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ