
ছবি: সংগৃহীত
ক্রিয়েটিনিন হলো এক ধরনের বর্জ্য পদার্থ, যা পেশির ব্যবহারে উৎপন্ন হয় এবং এটি সাধারণত কিডনির মাধ্যমে মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। তবে কিডনি যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তখন রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেলে কিছু শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন পায়ের পা ও গোড়ালি ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত, ঘনঘন প্রস্রাব, ক্লান্তি, ফোলা চোখ-মুখ, বমি বমিভাব, পেশিতে টান ধরা ইত্যাদি। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ক্রিয়েটিনিন কমাতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বেশি প্রোটিন খাবার ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে রান্না করা রেড মিট বা মাংস ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, কারণ রান্নার তাপ মাংসে থাকা ক্রিয়েটিনকে ক্রিয়েটিনিনে রূপান্তরিত করে। অতএব, রেড মিট খাওয়া সীমিত করা উচিত। এর বদলে, আপনি ডায়েটে স্যুপ (সবজি বা ডাল) রাখুন, যা ক্রিয়েটিনিন কমাতে সহায়ক।
ফাইবারযুক্ত খাবার: অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইবার বেশি খেলে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ কমে যায়। তাই ফল, শাকসবজি, এবং দানাশস্য বেশি করে খান, কারণ এগুলো ফাইবারের ভাল উৎস। এছাড়া, শাক-সবজি ও ফলের খাবার ক্রিয়েটিনিন কমানোর জন্য উপকারী।
যেসব খাবার পরিহার করতে হবে
ক্রিয়েটিনিন কমানোর জন্য কিছু খাবার এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
আলু: এটি উচ্চ পটাশিয়ামের কারণে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বাড়াতে পারে।
টমেটো: এতে পটাশিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি, যা কিডনি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ক্যানড খাবার: ক্যানড খাবারে অতিরিক্ত সোডিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে কিডনির সমস্যা বাড়ায়।
দুগ্ধজাত খাবার: বিশেষ করে যেসব খাবারে বেশি ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম থাকে, সেগুলো কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
কলা, লেবু, আচার: এগুলোও ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বাড়াতে পারে, তাই কম পরিমাণে খাওয়া উচিত।
প্রক্রিয়াজাত মাংস: প্রক্রিয়াজাত খাবারে উচ্চ পরিমাণে ফসফরাস ও সোডিয়াম থাকে, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
পানি ও ডিহাইড্রেশন
ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কমাতে পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডিহাইড্রেশন বা শরীরের পানির অভাবও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। বিশেষ করে কিডনির অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পানি পরিমিতভাবে খাওয়া উচিত।
ধূমপান ও মদ্যপান
ধূমপান কিডনির অসুখের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, তাই ধূমপান থেকে বিরত থাকা উচিত। অন্যদিকে, মদ্যপান সম্পর্কিত গবেষণায় দেখা গেছে, পরিমিত পরিমাণে মদ্যপান কিডনির অসুখের ঝুঁকি কমাতে পারে, তবে অতিরিক্ত মদ্যপান কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে কিছু বিশেষ খাবার এবং জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপন পর্যালোচনা করা উচিত। এছাড়া, কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ