
ছবি: সংগৃহীত
অটিজম—একটি স্নায়ুবিক বিকাশজনিত জটিলতা, যা শিশুর সামাজিক যোগাযোগ, আচরণ এবং শেখার পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে। তবে অটিজমকে সময়মতো চিহ্নিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও, অনেক ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অভিভাবকরা শিশুর অস্বাভাবিক আচরণকে হয়তো সময়ের সঙ্গে স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে ধরেন, অথবা মানসিক সমস্যা ভেবে ভুল বোঝেন। এই বিলম্বই শিশুর ভবিষ্যতের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখাচ্ছেন ইউনিভার্সিটি অফ হংকং-এর গবেষকরা। তাঁরা বলছেন, শিশুর মুখের ভিতরে থাকা ব্যাকটেরিয়াই ভবিষ্যতে অটিজম শনাক্তে কার্যকর একটি উপায় হতে পারে।
মুখের ব্যাকটেরিয়া থেকেই মিলতে পারে অটিজমের সঠিক ইঙ্গিত
গবেষণায় দেখা গেছে, অটিজমে আক্রান্ত শিশুর মুখে ১১টি বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব লক্ষ্য করা গেছে, যা সাধারণ শিশুদের মুখে অনুপস্থিত বা তুলনামূলকভাবে অনেক কম পরিমাণে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র ও হংকংয়ের শতাধিক শিশুর মুখ থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা করে এই ফলাফল পাওয়া গেছে।
এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৪৯ জন শিশুর মধ্যে অটিজম নির্ণয়ের হার ছিল ৮১ শতাংশ, যা এক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্য হিসেবে ধরা হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, এই নির্ভুলতা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বিশ্লেষণে নতুন দ্বার খুলে দিতে পারে।
‘মাইক্রোবায়োম বায়োমার্কার’ নামের প্রযুক্তিতে বদল আসছে ধরা পড়ার পদ্ধতিতে
গবেষকেরা এই পদ্ধতিকে নাম দিয়েছেন ‘Microbiome Biomarker’। এর মাধ্যমে মুখের জীবাণু বিশ্লেষণ করে জানা যাবে শিশুর মধ্যে অটিজমের ঝুঁকি কতটা। এই পদ্ধতিটি জার্নাল অফ ডেন্টিস্ট্রিতে প্রকাশিত গবেষণার মাধ্যমে স্বীকৃতিও পেয়েছে।
গবেষকদের দাবি, মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য ও মাইক্রোবায়োম বা ক্ষুদ্রজীবের সংমিশ্রণ বিশ্লেষণ করেই একটি শিশুর অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আগেভাগেই ধরা সম্ভব হবে।
অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা কেবল মানসিক সমস্যায় নয়, বরং শারীরিক সমস্যায়ও ভোগে। বিশেষ করে, পেটের সমস্যাগুলি খুব সাধারণ। বারবার পেটখারাপ, বদহজম, এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলো বেশিরভাগ অটিস্টিক শিশুর মধ্যে দেখা গেছে। মুখের জীবাণু বিশ্লেষণের সময় এমন অনেক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিও ধরা পড়েছে, যেগুলোর সঙ্গে এই শারীরিক সমস্যাগুলোর সরাসরি সংযোগ রয়েছে।
সঠিক সময়ে সনাক্তকরণে বাড়বে চিকিৎসার সুযোগ
গবেষকরা বলছেন, মুখের জীবাণু বিশ্লেষণের মাধ্যমে যদি শিশুদের মধ্যে অটিজমের লক্ষণ আগেভাগেই শনাক্ত করা যায়, তাহলে তাদের জন্য উপযুক্ত থেরাপি বা শিক্ষণপদ্ধতি দ্রুত শুরু করা যাবে। অটিজমের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকলেও বিভিন্ন থেরাপির মাধ্যমে শিশুদের দৈনন্দিন জীবনে স্বনির্ভর করে তোলা সম্ভব।
যেমন, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি, এবং বিশেষভাবে ডিজাইন করা শিক্ষাপদ্ধতিতে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের সমাজে আত্মনির্ভরভাবে গড়ে তোলা যায়। আর তাই রোগ সনাক্তকরণে যত তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নেওয়া যায়, শিশুর উন্নতির সম্ভাবনাও ততটাই বাড়ে।
মুখের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণেই মিলবে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ
গবেষকেরা আরও বলছেন, শিশুর নিয়মিত দন্তপরীক্ষার মাধ্যমে শুধুমাত্র দাঁতের স্বাস্থ্য নয়, বরং মানসিক বিকাশ সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে ভবিষ্যতে। মুখের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়ার অনিয়মিততা বা বিশেষ কিছু প্রজাতির উপস্থিতিই হয়ে উঠতে পারে বড় কোনো মানসিক বা স্নায়বিক সমস্যার ইঙ্গিত।
এই গবেষণাকে কেন্দ্র করে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা আশাবাদী, এক সময় মুখের জীবাণু বিশ্লেষণই হবে শিশুদের বিকাশজনিত অসুস্থতা শনাক্তের অন্যতম প্রধান উপায়।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
বাংলাবার্তা/এমএইচ