
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান ডিজিটাল যুগে অনলাইন স্ক্যাম বা প্রতারণা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গেই প্রতারণার ধরনও নানা রূপে বিস্তার লাভ করেছে, যার ফলে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়া, অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং বিশ্বাসের অবমূল্যায়ন হচ্ছে। তাই প্রতারণার এসব ধরণ সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।
অনলাইন প্রতারণার সাধারণ ধরন
ফিশিং আক্রমণ
ফিশিং হলো একটি প্রচলিত স্ক্যাম, যেখানে প্রতারকরা ইমেইল, মেসেজ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটি পরিচিত প্রতিষ্ঠানের ছদ্মবেশ ধারণ করে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে চায়। এসব মেসেজে প্রলোভনমূলক লিঙ্ক থাকে, যেগুলোর মাধ্যমে ব্যবহারকারী তাদের পাসওয়ার্ড বা ব্যাংক তথ্য প্রদান করে। সেই তথ্য ব্যবহার করে প্রতারকরা আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি করতে পারে।
ফেক ই-কমার্স স্ক্যাম
অনলাইন শপিংয়ের নাম করে সস্তায় আকর্ষণীয় অফারের মাধ্যমে প্রতারণা করা হয়। এখানে ক্রেতাদের কাছে নিম্নমানের পণ্য অথবা কোনও পণ্য না পাঠিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। সস্তায় ব্র্যান্ডেড পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে এবং পণ্য রিভিউ না থাকলে সতর্ক থাকা উচিত।
ভুয়া চাকরির অফার
বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে প্রতারকরা চাকরির অফারের মাধ্যমে মানুষের সাথে প্রতারণা করে থাকে। তারা পরিচিত কোম্পানির নামে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন ফি নেয়, কিন্তু প্রকৃত চাকরি প্রদান করা হয় না।
অনলাইনে আয়ের নামে প্রতারণা
ফেসবুক, টেলিগ্রাম বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে প্রথমে সোজা কাজের প্রস্তাব দিয়ে, পরবর্তীতে টাকা দাবি করা হয়। তারা লোভ দেখিয়ে বলে, কোনো গ্রুপে জয়েন করলে টাকা পাওয়া যাবে। বিশ্বাস অর্জন করলেই প্রতারকরা বেশি টাকা দাবি করে, যার ফলে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে যায়।
অনলাইন গেম ও ক্যাসিনো
এ ধরনের স্ক্যামে প্রতারকরা অনলাইন গেম বা ক্যাসিনো খেলার মাধ্যমে ‘সহজ উপার্জন’ বা ‘নিশ্চিত আয়’ এর প্রস্তাব দেয়। প্রথম দিকে খেলোয়াড়রা সামান্য টাকা উপার্জন করলেও পরবর্তীতে তারা বড় অঙ্কের টাকা হারিয়ে দেয় এবং জুয়াড়ির মতো প্রভাবিত হয়ে পড়ে।
ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যাম
এ ধরনের স্ক্যামে প্রতারকরা উচ্চ লাভের লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের ঠকায়। তারা প্রলোভনমূলক প্রস্তাব দিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি বা শেয়ার মার্কেটের মাধ্যমে মানুষকে টাকা দিয়ে থাকে, কিন্তু আসলে এটি একটি স্ক্যাম।
অনলাইন ব্ল্যাকমেইলিং
অনলাইন ব্ল্যাকমেইলিং হলো যখন প্রতারকরা আপনার ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করে আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করে। তারা এসব ছবি বা ভিডিওের মাধ্যমে টাকা আদায় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়।
নিরাপদ থাকার উপায়
বিশ্বস্ত উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন
ফিশিং বা ফেক স্ক্যাম থেকে বাঁচতে সঠিক ওয়েবসাইট ও বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা জরুরি। কখনোই অনিরাপদ বা অজানা লিঙ্কে ক্লিক করবেন না।
ব্যাংক এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সুরক্ষিত রাখুন
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ডিটেইলস বা পাসওয়ার্ড কখনোই অনলাইন মাধ্যমে শেয়ার করবেন না, বিশেষত মেসেজ বা ইমেইলের মাধ্যমে।
সতর্ক থাকুন অনলাইনে অফার ও চাকরির প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে
যেকোনো লোভনীয় চাকরি বা অনলাইন আয়ের অফারকে সন্দেহের চোখে দেখুন। অফারটি খুব ভালো মনে হলে, তার বৈধতা যাচাই করুন।
এন্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন
আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইসে একটি শক্তিশালী এন্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন, যাতে অনলাইনে কোনো ক্ষতিকর ভাইরাস বা স্ক্যাম থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না
এমনকি যদি কেউ আপনার বন্ধু বা পরিচিতি হতে দাবি করে, তাও আপনি তাদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত বা গোপন তথ্য শেয়ার করবেন না।
আইনি সহায়তা নিন
যদি আপনি কখনো অনলাইন প্রতারণার শিকার হন, দ্রুত আইনি সহায়তা নিন। সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ জানান এবং পুলিশকে অবহিত করুন।
ডিজিটাল স্ক্যামের আশঙ্কা সবসময় থাকে, কিন্তু সচেতনতা ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা নিজেদের এবং আমাদের প্রিয়জনদের নিরাপদ রাখতে পারি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ