
ছবি: সংগৃহীত
চার বছর বন্ধ থাকার পর আবারো নেটওয়ার্ক মনিটরিংয়ের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাচ্ছে দেশের মোবাইল অপারেটররা। ডেনস ওয়েভ লেংথ ডিভিশন মাল্টিপ্লেক্সিং (DWDM) যন্ত্র আমদানির অনুমতি ও তা নেটওয়ার্কে বসানোর সুবিধা পেতে যাচ্ছে মোবাইল অপারেটররা—এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এর মধ্য দিয়ে দেশে টেলিকম সেবায় দ্রুতগতি, নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ এবং খরচে স্বস্তি আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নতুন সিদ্ধান্তে কী পরিবর্তন আসছে?
বিটিআরসির ২৯৩তম কমিশন সভায় মোবাইল অপারেটরদের আবারও DWDM মেশিন আমদানি ও নেটওয়ার্কে সংযুক্তির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে মোবাইল অপারেটররা সরকারপ্রাপ্ত ৮৬ হাজারের বেশি ফাইবার লাইনের যথাযথ ব্যবহার করতে পারবে, যা এতদিন অব্যবহৃতই ছিল।
এই ফাইবারগুলো প্রতিমিটার মাত্র ৫-৭ টাকায় ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করতে পারবে অপারেটররা, যেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে একই পরিষেবা নিতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৭ টাকা। ফলে অপারেটরদের খরচ কমবে এবং দেশে ফাইবার সংযোগের পরিমাণও দ্রুত বাড়বে, যা শেষপর্যন্ত গ্রাহকদের উন্নততর সেবা দেওয়ায় সহায়ক হবে।
DWDM প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে?
DWDM (Dense Wavelength Division Multiplexing) হলো এমন একটি প্রযুক্তি, যা নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণ, গতি মাপা এবং দ্রুত সমস্যার স্থিতি শনাক্তে কার্যকর। এর মাধ্যমে মোবাইলে ফোরজি সেবার গতি (যেমন ৭ এমবিপিএস) নিরীক্ষা করা সম্ভব, একইসাথে ফাইবার লাইনের কোথায় সমস্যা হচ্ছে তা তাৎক্ষণিক শনাক্ত করা যায়। এই প্রযুক্তি নেটওয়ার্কের স্থায়িত্ব ও মান উন্নয়নে বিশেষভাবে সহায়ক।
২০২১ সালের পর কী হয়েছিল?
২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোবাইল অপারেটররাই DWDM মেশিন আমদানি করত এবং নেটওয়ার্কে ব্যবহার করত। কিন্তু ২০২১ সালে এই নিয়ন্ত্রণ ফাইবার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে দিয়ে দেয় বিটিআরসি। এর ফলে মোবাইল অপারেটররা সরকারি ফাইবার ব্যবহার করতে পারেনি কার্যকরভাবে। ফলে ৪৫ হাজার মোবাইল টাওয়ারের মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ ফাইবারে সংযুক্ত হতে পেরেছে।
ফাইবার সেবাদাতাদের আপত্তি
এই সিদ্ধান্তে বিরোধিতা জানিয়েছে ফাইবার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। ফাইবার অ্যাট হোম গ্লোবালের চিফ অপারেটিং অফিসার, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মশিউর রহমান বলেন, “আন্তর্জাতিক চাপের অজুহাতে একজন সার্ভিস দিতে না পারলে, অন্যকে দিয়ে দিতে হবে—এটা অযৌক্তিক দাবি।”
তবে এই আপত্তি গৃহীত হয়নি। বিটিআরসি সিদ্ধান্ত দিয়েছে—মোবাইল অপারেটরদের মেশিন আমদানির সুযোগ ফিরিয়ে দেওয়া হবে, যাতে টেলিকম সেবায় প্রতিযোগিতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
মোবাইল অপারেটরদের প্রতিক্রিয়া
রবি'র চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার সাহেদ আলম বলেন, “এই সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এটি দ্রুত ফাইবার সংযোগ সম্প্রসারণে সাহায্য করবে, যার সুফল ভোগ করবেন গ্রাহকরা।”
গ্রামীণফোন'র চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তানভীর মোহাম্মদ বলেন, “কম খরচে ও দ্রুতগতির নেটওয়ার্ক তৈরি এখন সম্ভব হবে। গ্রাহকরা এর সুফল দ্রুতই বুঝতে পারবেন।”
সরকারি ফাইবার ব্যবহারে নতুন সম্ভাবনা
শুধু মোবাইল অপারেটরদের জন্যই নয়, বিটিসিএল, রেলওয়ে সহ অন্যান্য সরকারি সংস্থাকেও ফাইবার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে ফাইবার নেটওয়ার্ক আরও বিস্তৃত হবে, এবং দেশের প্রত্যন্ত এলাকাতেও দ্রুতগতির ইন্টারনেট পৌঁছানো সম্ভব হবে।
চার বছর পর মোবাইল অপারেটরদের হাতে নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে দেশের টেলিকম খাতে গতি, স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা ফিরে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মাধ্যমে একদিকে গ্রাহকরা পাবেন উন্নত ও স্থিতিশীল নেটওয়ার্ক, অন্যদিকে সরকার পাবে রাজস্ব বাড়ানোর নতুন সুযোগ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ