
ছবি: সংগৃহীত
সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। ফেসবুক, অনলাইন ব্যাংকিং, শপিং অ্যাপ—এসবের পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপের মতো জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপও এখন হ্যাকারদের অন্যতম প্রধান টার্গেট। প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছেন—চ্যাট করছেন, গুরুত্বপূর্ণ নথি আদান-প্রদান করছেন, ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও শেয়ার করছেন, এমনকি অফিসের কাজও সারছেন। ফলে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া মানে শুধুই একটা অ্যাপের ক্ষতি নয়, বরং ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া। এই অবস্থায় কী করবেন? কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন আপনার প্রিয় অ্যাপটি? জেনে নিন কিছু কার্যকর উপায়।
টু-স্টেপ অথেনটিকেশন: সুরক্ষার প্রথম স্তর হিসেবে হোয়াটসঅ্যাপে 'টু স্টেপ অথেনটিকেশন' অন করা অত্যন্ত জরুরি। এই ফিচার চালু করলে অ্যাকাউন্টে লগইন বা রিসেট করার সময় ৬ সংখ্যার একটি পিন কোড চাওয়া হবে। ফলে কেউ যদি আপনার মোবাইল নম্বর জানে বা সিম ক্লোন করে থাকেও, শুধু নম্বর দিয়ে লগইন করতে পারবে না। এই অতিরিক্ত স্তরের নিরাপত্তা অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া অনেকাংশে ঠেকাতে পারে।
বায়োমেট্রিক লক: আপনি চাইলে আপনার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপ্লিকেশনটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফেস আইডি বা টাচ আইডি দিয়ে লক করতে পারেন। আইফোন ব্যবহারকারীরা টাচ আইডি ও ফেস আইডি এবং অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে অ্যাপে প্রবেশ সীমাবদ্ধ করতে পারেন। এটি হলে কেউ আপনার ফোন নিয়ে অ্যাপ খুলতে পারবে না।
ডিসঅ্যাপিয়ারিং মেসেজ: এই ফিচারটি চালু করলে নির্দিষ্ট সময় পর চ্যাট স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিলিট হয়ে যায়। আপনি চাইলে যেকোনো ব্যক্তিগত বা গ্রুপ চ্যাটে ২৪ ঘণ্টা, ৭ দিন বা ৯০ দিন পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তা মুছে যাওয়ার অপশন চালু করতে পারেন। এতে করে ব্যক্তিগত তথ্য দীর্ঘদিন ধরে মেসেজ আকারে থেকে যাওয়ার ঝুঁকি কমে।
ভিউ ওয়ান্স: ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও যদি কাউকে পাঠাতে হয়, তবে 'ভিউ ওয়ান্স' ফিচারটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি অন করলে রিসিভার ছবিটি একবার দেখার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটি ডিলিট হয়ে যাবে। ফলে মিডিয়া ফাইল অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কমে যায়।
এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড ব্যাকআপ: হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের ব্যাকআপ সাধারণত গুগল ড্রাইভ বা আইক্লাউডে রাখা হয়। তবে আপনি চাইলে ব্যাকআপেও 'এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন' চালু করতে পারেন। এতে আপনার ব্যাকআপ ফাইলগুলো এমনভাবে এনক্রিপ্ট করা হবে যে, কেবল আপনার নির্ধারিত পাসকোড বা কী ছাড়া সেগুলো ডিক্রিপ্ট করা সম্ভব হবে না।
গ্রুপ প্রাইভেসি ও অ্যাডমিন কন্ট্রোল: হোয়াটসঅ্যাপে নতুন করে কোনো গ্রুপে যুক্ত হওয়ার আগে এখন অনুমতি প্রয়োজন হয়। আপনি চাইলে কেবল কনট্যাক্টে থাকা ব্যক্তিরাই আপনাকে গ্রুপে যুক্ত করতে পারবে এমন সেটিং চালু করতে পারেন। একইসঙ্গে গ্রুপ অ্যাডমিন হিসেবে আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন কে মেসেজ পাঠাতে পারবে, কে তথ্য পরিবর্তন করতে পারবে ইত্যাদি। এতে করে গ্রুপ হাইজ্যাক বা তথ্য ফাঁসের আশঙ্কা কমে যায়।
হ্যাক হলে করণীয়: যদি আপনার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকাউন্টটি ডি-রেজিস্টার করুন। এতে আপনার অ্যাকাউন্ট সব ডিভাইস থেকে সাইনআউট হয়ে যাবে এবং হ্যাকারদের অ্যাক্সেস বন্ধ হবে। এরপর আপনার সিমকার্ড ও মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করে নম্বরটি পুনরুদ্ধার করুন এবং হোয়াটসঅ্যাপে নতুন করে লগইন করুন। সঙ্গে সঙ্গে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করুন এবং অ্যাকাউন্টের সাথে যুক্ত ইমেইল ও ফোন নম্বর চেক করুন।
সর্বোপরি, প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবনে অনেক সুবিধা নিয়ে এসেছে, তেমনি কিছু ঝুঁকিও তৈরি করেছে। সেই ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকতে হলে আমাদের নিজেদেরকেই হতে হবে সচেতন। হোয়াটসঅ্যাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুরক্ষা ফিচারগুলো ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত চেক করুন আপনার প্রাইভেসি সেটিংস। নিরাপদ থাকুন, সুরক্ষিত থাকুন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ