
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহকদের জন্য আসছে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। ন্যূনতম খরচে আরও উচ্চগতির সংযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বড় এক ঘোষণা দিয়েছে দেশের ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘ইন্টারনেট সেবা: সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক ঘোষণা দেন, এখন থেকে মাত্র ৫০০ টাকায় গ্রাহকেরা পাবেন ১০ এমবিপিএস (Mbps) গতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ। যা বর্তমানে চালু থাকা ৫ এমবিপিএস গতির দ্বিগুণ।
এই ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি এটি প্রযুক্তির গণপ্রয়োগে নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বড় পরিকল্পনার আভাস: সর্বনিম্ন গতি ২০ এমবিপিএস করার উদ্যোগ
গোলটেবিল আলোচনায় ইমদাদুল হক আরও জানান, শুধু ১০ এমবিপিএস নয়, সংগঠনটির লক্ষ্য হলো ব্রডব্যান্ড সেবার সর্বনিম্ন গতি ২০ এমবিপিএসে উন্নীত করা। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন লাইসেন্স আপগ্রেডেশন, যা সরকারের অনুমোদন ও প্রক্রিয়াগত সহায়তার ওপর নির্ভর করছে।
তিনি বলেন, “আমরা চাই জনগণ আরও দ্রুত, আরও সাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা পাক। আজকের ঘোষণাটি সেই দিকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ার আহ্বান
ইন্টারনেট সেবাকে ভবিষ্যত প্রযুক্তি নির্ভর অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবও উত্থাপন করেছে আইএসপিএবি।
১. লাইসেন্সের মেয়াদ ১০ বছর নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। এর ফলে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ও নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ কার্যক্রমে নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব আসবে বলে তারা মনে করেন।
২. সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান উপস্থিত ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, বর্তমান জটিল প্রক্রিয়ার কারণে আইএসপিদের পক্ষে প্রযুক্তি আপগ্রেড, কাস্টমার সাপোর্ট ও নেটওয়ার্ক স্থাপন কাজ জটিল হয়ে পড়ছে।
৩. সোশ্যাল অবলিগেশন ফান্ড (SOF) এর অস্থায়ী স্থগিতাদেশও চেয়েছে সংগঠনটি—তারা বলছে, অন্তত তিন বছরের জন্য এসওএফ ফান্ড স্থগিত রাখা হলে, এই সময়ের মধ্যে নেটওয়ার্ক আপগ্রেডেশন এবং গ্রাহকসেবার মানোন্নয়নে বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।
প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আহ্বান
সংগঠনটির নেতারা আরও অভিযোগ করেন, দেশের লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া এখনো জটিল ও সময়সাপেক্ষ। দ্রুততার সঙ্গে অনুমোদন, লাইসেন্স নবায়ন ও সেবা সম্প্রসারণে প্রশাসনিক সহায়তা না পেলে টেকসই ও সাশ্রয়ী ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যাবে।
তাদের মতে, বর্তমান যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রযুক্তি খাতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। এজন্য আইন ও নীতিমালায় সময়োপযোগী সংস্কার দরকার, যাতে নতুন উদ্যোক্তারাও বাজারে প্রবেশ করে প্রতিযোগিতা বাড়াতে পারেন।
প্রধান অতিথিদের বক্তব্য: সরকারের আগ্রহ
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, “সরকার চায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মানুষ উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পাক। আজকের এই ঘোষণা আমাদের সেই লক্ষ্যের এক ধাপ অগ্রগতি।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী। তিনি বলেন, “বিটিআরসি বরাবরই ইন্টারনেট সেবার মানোন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আইএসপিএবি’র প্রস্তাবগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবো।”
ইন্টারনেট গ্রাহকদের জন্য বাস্তব সুফল কী হবে?
৫০০ টাকার সংযোগে ১০ এমবিপিএস স্পিড মানে দ্বিগুণ গতিতে ভিডিও স্ট্রিমিং, ফাইল ডাউনলোড ও অনলাইন ক্লাস হবে আগের তুলনায় আরও মসৃণ।
গ্রামাঞ্চল ও শহরতলিতে সাশ্রয়ী দামে উচ্চগতির সংযোগ পাওয়ার সুযোগ বাড়বে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ব্যবসা খাতে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার আরও বিস্তার হবে।
প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোক্তারা লাভবান হবেন সাশ্রয়ী ব্যান্ডউইথ পেয়ে।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট খাতে এই নতুন পদক্ষেপ একটি যুগান্তকারী মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে যদি যথাযথ নীতিমালা, প্রশাসনিক সমর্থন ও টেকসই বিনিয়োগ নিশ্চিত করা যায়। দেশের লাখো ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এখন এই ঘোষণার বাস্তবায়ন ও এর সুফল পাওয়ার অপেক্ষায়।
সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে যদি এই পরিকল্পনাগুলো দ্রুত কার্যকর হয়, তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন আরও একধাপ বাস্তবের কাছাকাছি চলে আসবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ