
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের যুগে বয়স কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। সাত থেকে সত্তর—সবার হাতেই স্মার্টফোন, আর সবারই নানাভাবে যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত থাকার আগ্রহ। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা তো সামাজিক মাধ্যমের প্রতি আরও বেশি আগ্রহী। সুযোগ পেলেই তারা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ নানা প্ল্যাটফর্মে ঢুঁ মারতে চায়। তবে সমস্যা হয় তখনই, যখন বয়স ১৮ না পেরোনো সত্ত্বেও কিশোররা বয়স বাড়িয়ে নিজেদের প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলে।
সামাজিক মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্কদের অশালীন বা অনুপযুক্ত কনটেন্টের মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি। সে কারণে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামসহ প্রায় সব বড় সামাজিক মাধ্যমেই বয়সের সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, ফেসবুক কিংবা ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ব্যবহারকারীর ন্যূনতম বয়স ১৩ বছর হতে হয়। তবে ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য কিছু বিশেষ বিধিনিষেধ কার্যকর থাকে।
এই সমস্যা সমাধানে ইনস্টাগ্রাম ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হলে ব্যবহারকারীকে তার বয়স সংক্রান্ত নথিপত্র, যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদের কপি জমা দিতে বলা হতো। এ ছাড়া, যদি বয়স ১৬ বছরের কম হয়, তবে সেই অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ অভিভাবকের হাতে দেওয়া হতো। একই সঙ্গে অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু সীমিত সেটিংস কার্যকর করা হতো যাতে তারা প্ল্যাটফর্মের পূর্ণ সুবিধা ব্যবহার করতে না পারে।
কিন্তু সমস্যা থেকে যাচ্ছিল—যারা ইতিমধ্যে ভুয়া তথ্য দিয়ে ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলেছে, তাদের শনাক্ত করা কিভাবে সম্ভব? প্রথাগত কাগজপত্র যাচাইয়ের মাধ্যমে সব ব্যবহারকারীকে পরীক্ষা করা কঠিন। এমন অবস্থায় ইনস্টাগ্রাম এবার আরও আধুনিক সমাধানের দিকে হাত বাড়িয়েছে। সংস্থাটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে ব্যবহারকারীদের প্রকৃত বয়স নির্ধারণের চেষ্টা করা হবে।
নতুন এই এআই টুল ব্যবহারকারীর অ্যাক্টিভিটি, পোস্ট করা ছবি, ফলো করা পেজ, মন্তব্যের ধরন, এমনকি কথোপকথনের ধরণ বিশ্লেষণ করে অনুমান করতে পারবে সেই ব্যবহারকারী প্রকৃতপক্ষে কতো বছরের। অর্থাৎ ব্যবহারকারী বয়স লুকাতে চাইলেও, তার ডিজিটাল আচরণ তাকে প্রকাশ করে দেবে।
এআই যদি কোনো অ্যাকাউন্টের বয়স সন্দেহজনক মনে করে, তবে ইনস্টাগ্রাম সেই অ্যাকাউন্টকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘টিন’ (Teen) ক্যাটাগরিতে পরিবর্তন করে দেবে। এর ফলে অ্যাকাউন্টটি আর প্রাপ্তবয়স্কদের মতো স্বাধীনভাবে ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষ কিছু বিষয় নিষিদ্ধ হবে, যেমন সবধরনের কনটেন্ট দেখার সুযোগ, খোলা প্রোফাইল রাখা ইত্যাদি। সবচেয়ে বড় বিষয়, এমন টিন অ্যাকাউন্টের অনেক অংশের নিয়ন্ত্রণ অভিভাবকদের হাতে চলে যাবে।
সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই পদ্ধতি প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে পাইলট প্রোগ্রাম চালানো হবে। সফল হলে ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী এটি ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এর ফলে ভবিষ্যতে সামাজিক মাধ্যমে শিশুদের নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এআই দিয়ে বয়স শনাক্তকরণের এই উদ্যোগ প্রযুক্তির ব্যবহারের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তবে সমালোচকরাও রয়েছেন। তারা বলছেন, ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে বয়স নির্ধারণ করলে গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে ইনস্টাগ্রামকে অবশ্যই ব্যবহারকারীদের সম্মতি নিতে হবে এবং পরিষ্কার নীতিমালা চালু করতে হবে।
ইতিমধ্যে অনেক অভিভাবক ও শিশুরক্ষা সংগঠন এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, সামাজিক মাধ্যমে শিশুরা নানা ঝুঁকির মুখোমুখি হয়—বিষণ্ণতা, অনলাইন বুলিং, অশ্লীল কনটেন্ট ইত্যাদির মাধ্যমে। বয়স শনাক্ত করে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিলে এসব ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমবে।
সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ইনস্টাগ্রাম এআই নির্ভর বয়স যাচাইয়ের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে। তখন দেখা যাবে, বয়স কারচুপি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রবেশের ফাঁকফোকর কতটা বন্ধ করা সম্ভব হয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ