ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহু
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ কবে নাগাদ শেষ হবে, তা কেউই জানে না; তবে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও অনির্দিষ্টকালের জন্য গাজার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে ইসরায়েলের হাতে।
সোমবার এ তথ্য জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহু। একই সঙ্গে আরও একবার গাজায় যুদ্ধবিরতি আহ্বানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ‘গাজা উপত্যকার শাসনক্ষমতায় তাদেরই থাকা উচিত, যারা হামাসকে অনুসরণ করতে ইচ্ছুক নয়। আমি মনে করি, গাজার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব ইসরায়েলের হাতে থাকা উচিত এবং তা অনির্দিষ্টকালের জন্য। কারণ সম্প্রতি যা ঘটছে, তা আমাদের কাঙ্ক্ষিত ছিল না। আমরা এমনটা চাইনি।’
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চলানোর পর সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। সেই অভিযান এখনও চলছে।
হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। এছাড়া হামলার প্রথম দিনই ইসরায়েল থেকে অন্তত ২৩৪ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে গেছে হামাস।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর অভিযানে গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১০ হাজার। এই নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু ও নারী।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৫৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর এই প্রথম এত বড় মাত্রার সংঘাত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের আল-আকসা অঞ্চলে। বিমান বাহিনীর হামলায় গত এক মাসে গাজা উপত্যকায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ১৫ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে প্রায় ৬ লাখ ৭০ হাজার মানুষ আনরোয়া পরিচালিত স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।
ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করার আগ পর্যন্ত এই যুদ্ধ তারা থামাবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা ইসরায়েরের এই অবস্থানকে সমর্থনও করেছে। তবে রাশিয়া, চীন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল এবং জাতিসংঘ শুরু থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতির সোচ্চার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
সোমবারের সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে নেতানিয়াহু বলেন, ‘ছোটোখাট কৌশলগত বিরতি হতেই পারে,হয়তো এক ঘণ্টা বা তার কিছু বেশি সময়…অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি গাজায় ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পাঠানো এবং মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের গাজা থেকে বের হতে যতক্ষণ সময় লাগবে ততক্ষণ। কিন্তু আমি মনে করি না সেখানে একটি সাধারণ যুদ্ধবিরতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা রয়েছে।’
সেই সঙ্গে ইরান এবং হিজবুল্লাহকে এই যুদ্ধ থেকে দূরে থাকার সতর্কবার্তা দিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করব—তারা বুঝবে যে এই যুদ্ধে যদি তারা জড়িয়ে পড়ে, তাহলে আমরা খুব, খুবই শক্তভাবে তার প্রতিক্রিয়া জানাব এবং আমার মনে হয় না তারা সেই ভুল করবে।’