সংগৃহীত ছবি
ফিলিস্তিনের জনগণের সমর্থনে ভারতের কিছু মুসলিম দোকানদার ও ক্রেতা ইসরায়েলি এবং মার্কিন পণ্য বয়কট করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে দেশটির কিছু অঞ্চলে ক্রেতা-বিক্রেতারা ঘোষণা দিয়ে ওই দুই দেশের পণ্য বজর্ন করেছেন। স্থানীয় সম্প্রদায়ের মাঝে ইসরায়েলি ও মার্কিন পণ্য বর্জনের আন্দোলন শুরু করেছেন তারা।
মঙ্গলবার কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক ভিডিও প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারতের মোহাম্মদ নাদিম নামের এক দোকানদার বলেন, ‘‘পণ্য বর্জনের ফলে আমাদের আয় সামান্য কমে যাবে, আমরা তো তাদের সাথে আসলে লড়াই করতে পারি না। কিন্তু আমরা তাদের অর্থনীতিকে বর্জন করতে পারি।’’
তিনি বলেন, ‘‘আগে ইসরায়েলি ও মার্কিন পণ্যের চাহিদা তুমুল থাকলেও বর্তমানে তা কমে গেছে। আমরা যখন এসব বর্জন করবো, তখন কোথাও না কোথাও তা প্রভাব ফেলবে এবং আমরা ইতোমধ্যে বর্জন করেছি।’’
ইসরায়েলি ও মার্কিন পণ্য বর্জনে ভারতে যে অল্প কিছু দোকানদার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মোহাম্মদ নাদিম তাদের একজন। বর্তমানে তার দোকানে পেপসি এবং কোকা কোলার কোনো মজুদ নেই। ভারতের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ইসরায়েলি ও মার্কিন পণ্য বর্জনের আন্দোলন শুরু হয়েছে। কিছু মুসলিম পরিবার বলেছেন, তারাও ইসরায়েলি ও মার্কিন পণ্য বর্জন করছেন।
৯ বছর বয়সী আশার ইমতিয়াজও ইসরায়েল-মার্কিন পণ্য বর্জনের আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। সে বলেছে, ‘‘ফিলিস্তিনে মুসলিমদের ওপর ইসরায়েলের বর্বরতার খবর শোনার পর আমি এসব পণ্য কেনা বন্ধ করে দিয়েছি। শিশু হিসেবে আমরা যেসব ব্র্যান্ডের পণ্য ভালোবাসতাম তারা এখন সহিংস হয়ে উঠছে। তারা ইসরায়েলি সরকারের সহায়তায় অর্থ ব্যবহার করছে। আমি আর কোনও সহিংসতা চাই না। যে কারণে গাজাকে রক্ষায় আমাদের এসব পণ্য কেনা বন্ধ করা দরকার।’’
নিখাত রেহমান নামের অপর এক নারী বলেন, ‘‘এটা আমাদের সামান্য অবদান। কারণ এখানে আমাদের সাধারণ জনগণের ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানানো অন্য কোনো উপায় নেই। এ জন্য আমি মনে করি, আমরা যদি ইসরায়েলি এবং আমেরিকান পণ্য এভাবে বর্জন করি, তাহলে গাজায় বসবাসরত মানুষের জন্য তা সামান্য হলেও অবদান রাখবে।’’
ভারতীয় দোকানদাররাও বলেছেন, তাদের ক্রেতারা এখন বিকল্প ব্র্যান্ডের পণ্য খুঁজছেন। ইসরায়েলি-আমেরিকান পণ্যের চাহিদা আগের তুলনায় কমে গেছে।
ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ-প্রতিবাদকারীদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভকারীদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কঠোর হস্তে দমন করলেও দেশটিতে ইসরায়েলপন্থীরা প্রায়ই বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন।
দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষক শারজিল উসমানি আলজাজিরাকে বলেছেন, প্রথমত এখানে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করাটাও লড়াইয়ের মতো। পুলিশের সাথে সংঘর্ষ, কারাদণ্ড এবং আইনি লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হয় বিক্ষোভকারীদের। তিনি বলেন, সম্প্রতি ফিলিস্তিনের সমর্থনে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। পরে তাদের চারজনের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।