ছবি সংগৃহীত
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েল। তবে এই চুক্তি সফলতার মুখ কীভাবে দেখলো, কী কী বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে, কতজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে, এর ভবিষ্যৎ বা কী এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়।
যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে
গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি রয়েছেন ২৪০ জন ইসরায়েলি। তাদের মধ্যে থেকে ৫০ জন নারী ও শিশুকে মার্কিন সমর্থন এবং কাতারের মধ্যস্থতায় চারদিনের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হবে। জনৈক মার্কিন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, যে ৫০ জনকে মুক্তি দেওয়া হবে তাদের মধ্যে চার বছর বয়সী এক শিশুসহ তিনজন মার্কিন নাগরিক রয়েছেন।
এদিকে হামাস বলছে, কারাবন্দি ১৫০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। তাদের সবাই নারী ও শিশু। সেই সাথে ত্রাণ ও অনুদান যেন গাজায় ঠিকভাবে পৌঁছাতে পারে সেজন্য রাফাহ সীমান্ত খুলে দেওয়া হবে।
এই চারদিন দক্ষিণ গাজায় বিমান হামলা বন্ধ থাকবে এবং উত্তরে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত হামলা বন্ধ থাকবে। যুদ্ধবিরতি চলাকালীন ইসরায়েলি সামরিক যান গাজায় প্রবেশ করবে না এবং ইসরায়েলি সেনারা গাজার কোন বেসামরিক নাগরিককে গ্রেফতার করতে পারবে না।
এদিকে ইসরায়েলি সরকার জানিয়েছে, প্রতি ১০ জন অতিরিক্ত জিম্মি মুক্তির জন্য যুদ্ধবিরতি একদিন করে বাড়ানো হবে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত গাজায় ছয় সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলছে ইসরায়েলি আগ্রাসন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১৪ হাজার ১২৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অপরদিকে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২শ’ ইসরায়েলি প্রাণ হারিয়েছেন।
ইসরায়েল কেন সমঝোতায় রাজি হলো
ইসরায়েল সরকার জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে অভ্যন্তরীণভাবে তীব্র চাপের মধ্যে পড়েছে। তেল আবিবে নেতানিয়াহুর বাড়ির সামনেও এই নিয়ে কয়েকদফা বিক্ষোভ হয়েছে। সোমবার রাতে জিম্মিদের স্বজনদের নিয়ে বৈঠকে বসলে নেতানিয়াহুর ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন তারা।
অন্যদিকে গাজায় চলমান মানবিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় গাজার ১৭ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সেই সঙ্গে খাবার, পানি, ওষুধ, জ্বালানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে ১০টি তে সেবাদান কাজ চালু আছে।
আবার গত সপ্তাহে, শতকরা ৬৮ ভাগ মার্কিন নাগরিক জানিয়েছেন তারা যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করেন।
এদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী তাদের অবস্থান জোরদার করেছে। হামাস প্রতিনিয়ত যুদ্ধক্ষেত্রে হারাচ্ছে, কারণ ইসরায়েল দক্ষিণ গাজাসহ উত্তর গাজার বিশাল অংশ এরই মধ্যে দখল করে ফেলেছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, হামাসের ২৪টি যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে ১০টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং তাদের নেতৃত্ব এখন গাজার দক্ষিণ প্রান্তে স্থানান্তরিত হয়েছে ।
যুদ্ধবিরতি শেষ হলে কি আবার যুদ্ধ শুরু হবে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, হামাস চায় আরও কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দিয়ে যুদ্ধবিরতির সময় বাড়াতে। তবে ইসরায়েল হামাসকে যে নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেই ধারায় টিকে থাকতে তারা যুদ্ধে ফিরে আসতে চাইবে। ইসরায়েলের যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে আসার আরও বড় উদ্দেশ্য রয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এখনও গাজার উত্তরাঞ্চল পুরোপুরি দখল করেনি। যদিও মঙ্গলবার ইসরায়েলি সেনারা জাবালিয়াকে ঘিরে ফেলেছিল, যাকে হামাসের শক্ত ঘাঁটি বলে বিবেচনা করা হয়। এর পাশেই রয়েছে ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল যা উত্তরে একমাত্র বড় চিকিৎসাকেন্দ্র।
ইসরায়েলি কমান্ডাররাও গাজার দক্ষিণে এবং বিশেষ করে খান ইউনিস শহরের তাক করে আছে। তাদের বিশ্বাস হামাসের হাতে জিম্মিরা সেখানে থাকতে পারেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে তারা গাজার দক্ষিণে স্থল আক্রমণ সমর্থন করবে না যদি না বেসামরিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়।
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন,যুদ্ধ পুনরায় শুরু হবে ,আমরা থেমে থাকব না।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান