
সংগৃহীত
রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান সামরিক তৎপরতার প্রেক্ষাপটে ইউরোপজুড়ে প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি জোরদার করা হচ্ছে। জার্মানি, পোল্যান্ড, ফ্রান্স, এবং বেলজিয়ামসহ একাধিক দেশ প্রতিরক্ষা নীতিতে পরিবর্তন আনছে। কেউ সামরিক বাহিনী বাড়াচ্ছে, কেউ বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ চালুর চিন্তা করছে, আবার কেউ পারমাণবিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
পোল্যান্ডের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও পারমাণবিক নিরাপত্তা
সম্প্রতি পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক ঘোষণা দিয়েছেন, দেশের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে সামরিক প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। বর্তমানে পোল্যান্ডের সেনা সংখ্যা দুই লাখ হলেও এটিকে পাঁচ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি, রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের অনুরোধ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ডুডা। তবে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক ভিন্ন কৌশল নিচ্ছেন। তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে আলোচনায় রয়েছেন, যেখানে ফ্রান্স ইউরোপকে পারমাণবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। রাশিয়া এই পরিকল্পনাকে ‘উসকানিমূলক’ হিসেবে দেখছে এবং কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
জার্মানিতে বাধ্যতামূলক সেনা প্রশিক্ষণের আলোচনা
জার্মানিতে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। দেশটির কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা সামরিক বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। জার্মানিতে বর্তমানে এক লাখ ৮১ হাজার সেনা রয়েছে, তবে উচ্চপদে ২৮% পদ শূন্য রয়েছে। এ অবস্থায় সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর থেকে দেশটি পুনঃসশস্ত্রীকরণে মনোযোগী হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা
রাশিয়ার সম্ভাব্য হুমকির প্রেক্ষিতে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ)। ১৯ মার্চের মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারের জন্য একটি শ্বেতপত্র উপস্থাপন করা হবে। এতে প্রতিরক্ষা ও সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৮০০ বিলিয়ন ইউরোর বিনিয়োগ পরিকল্পনা রয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিরক্ষা কমিশনার আন্দ্রিয়াস কুবিলিয়াস জানিয়েছেন, রাশিয়ার সামরিক শিল্প পুরোপুরি সক্রিয় রয়েছে এবং ন্যাটোর সঙ্গে সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে, ইইউ দেশগুলোকে সামরিক সরঞ্জাম ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপজুড়ে সামরিক প্রস্তুতির এই ঢেউ শুধু রাশিয়ার হুমকির প্রতিক্রিয়া নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রতিরক্ষার জন্য একটি কৌশলগত পুনর্বিন্যাস। সামনের দিনগুলোতে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিরক্ষা নীতি কীভাবে গঠিত হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ