
ছবি: সংগৃহীত
তুরস্কে বিরোধী দলীয় নেতা এবং ইস্তাম্বুলের মেয়র একরাম ইমামোগলুর গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠায় বিরোধী দলকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, "সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি এবং পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার দায় বিরোধীদেরই নিতে হবে। আইনত এবং রাজনৈতিকভাবে তাদের জবাবদিহি করতে হবে।"
ইস্তাম্বুলের মেয়রের গ্রেফতার ও বিক্ষোভের সূত্রপাত
গত বুধবার দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ইমামোগলুকে, যিনি এরদোগানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত। তার গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে তুরস্কজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) অভিযোগ করেছে, "এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং গণতন্ত্রবিরোধী পদক্ষেপ।"
বিক্ষোভের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকায় গত রোববার দেশটির একটি আদালত ইমামোগলুর বিচার মুলতবি ঘোষণা করলেও তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এর পরপরই হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এবং বিক্ষোভ সহিংস আকার ধারণ করে।
সরকারের অবস্থান ও কঠোর বার্তা
সোমবার (২৪ মার্চ) আঙ্কারায় মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এরদোগান বলেন, "আমরা হতবাক হয়েছি, কারণ বিরোধী দলের নেতারা জনগণকে রাস্তায় নামতে উসকানি দিচ্ছে। এতে শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।"
তিনি আরও বলেন, "জনগণের জানমালের ক্ষতি ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের ঘটনা আমরা বরদাশত করব না। যারা সহিংসতার আশ্রয় নিচ্ছে, তারা শিগগিরই এর পরিণতি টের পাবে।"
সরকারের দমনপীড়ন ও গ্রেফতার
সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চলমান বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
গত পাঁচ দিনে ১,১৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সহিংসতায় ১২৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়ারলিকায়া।
দেশব্যাপী বিক্ষোভ দমনে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং বেশ কিছু এলাকায় জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিরোধীদের পাল্টা প্রতিক্রিয়া
সিএইচপি এই গ্রেফতারকে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত বলে আখ্যা দিয়ে ইমামোগলুর মুক্তির দাবিতে আরও বড় আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, "এই সরকার জনগণের কণ্ঠরোধ করতে চায়, কিন্তু আমরা তা হতে দেব না।"
তবে এরদোগানের সরকার যে কোনো মূল্যে এই আন্দোলন দমন করতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, "এই বিক্ষোভ শেষ হবে, এবং যারা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে, তারা অনুতপ্ত হবে।"
ভবিষ্যৎ কী হতে পারে?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইমামোগলুর গ্রেফতার তুরস্কে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই ঘটনার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও তুরস্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, কারণ পশ্চিমা দেশগুলো ইতিমধ্যে এই গ্রেফতারকে গণতন্ত্রের পরিপন্থী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।
আগামী দিনে বিক্ষোভ দমনে সরকার আরও কঠোর হবে, নাকি রাজনৈতিক সমঝোতার দিকে এগোবে—এটাই এখন বড় প্রশ্ন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ