
ছবি: সংগৃহীত
ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ক্রমবর্ধমান হামলা এবং বৈষম্যের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সংস্থা কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)। সংস্থাটির ২০২৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ভারতে মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা এবং বৈষম্যের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য ছড়ানোর পাশাপাশি ভুল তথ্য প্রচারে লিপ্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনী প্রচারণার সময় সংখ্যালঘুদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি মুসলমানদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, তারা ‘বেশি বেশি সন্তান’ জন্ম দিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক ভারসাম্য পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। মোদি ও বিজেপির নেতারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর মাধ্যমে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মার্কিন সংস্থাটির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ভারতে মুসলমান, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল, বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ন এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে বৈষম্যমূলক নীতিমালা বাস্তবায়নের মতো বিষয়গুলো এই সংকটকে আরও গভীর করছে।
ইউএসসিআইআরএফ-এর প্রতিবেদনে ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) এর ওপর সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গুপ্তহত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগের ভিত্তিতে এই সুপারিশ করা হয়েছে।
মার্কিন সংস্থাটির এই প্রতিবেদনের ব্যাপারে ভারতের সরকার বরাবরের মতোই নিন্দা জানিয়েছে এবং এটিকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে অভিহিত করেছে। নয়া দিল্লির দাবি, মোদি সরকার সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে কাজ করছে এবং বিদ্যুতায়ন ও ভর্তুকির মতো সরকারি সুবিধা থেকে তারা উপকৃত হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারকর্মীরা ভারতীয় সংখ্যালঘুদের দুর্দশার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব। মার্কিন ফেডারেল সংস্থাটির এই প্রতিবেদন নতুন করে বিষয়টি আলোচনায় এনেছে। তবে ভারতের সরকার বরাবরের মতোই এই অভিযোগগুলোকে অস্বীকার করে আসছে। আগামী দিনে এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কেমন হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ