
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় ইসরাইলি হামলা অব্যাহত থাকায় গত এক সপ্তাহে অন্তত ১ লক্ষ ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। জাতিসংঘের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ক্রমাগত বোমাবর্ষণ ও কঠোর অবরোধের ফলে গাজার জনজীবন ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়েছে।
গাজায় মানবিক বিপর্যয়: জাতিসংঘের সতর্কতা
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গাজার প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ এক ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি অবরোধের কারণে ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
ডুজারিক বলেন, “গাজায় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। ইতোমধ্যে ১৭% এলাকা, অর্থাৎ প্রায় ৬১ বর্গকিলোমিটার (২৪ বর্গ মাইল) এলাকার মধ্যে তাদের ঠাঁই নিতে হচ্ছে। নিরাপদ আশ্রয়, খাদ্য, পানি এবং চিকিৎসাসেবা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”
ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা, দিনদিন বাড়ছে দুর্ভোগ
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ১৮ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ৫০টি মানবিক কার্যক্রমের মধ্যে ৪০টিই ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ প্রত্যাখ্যান করেছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র আরও জানান, “আজও বেশ কয়েকটি মানবিক মিশন বাতিল করা হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও শোচনীয় করে তুলছে।”
নতুন হামলায় আরও ২৭ জন নিহত, নিহতদের মধ্যে ৬ শিশু
গাজার বিভিন্ন অংশে ইসরাইলি বাহিনীর তাণ্ডব থামছে না। বুধবার চালানো বিমান হামলায় নতুন করে ২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬ জন শিশু রয়েছে।
উত্তর গাজায় একটি বাড়িতে হামলায় ৮ জন নিহত হয়, যার মধ্যে ৬ জন শিশু।
কেন্দ্রীয় গাজায় বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে এক বাবা ও তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।
মুসিরাত শরণার্থী শিবিরে এক মসজিদে হামলায় ৪ জন নিহত হয়েছে।
আল-জাওয়াইদা এলাকায় শরণার্থী শিবিরে হামলায় নিহত ২ জন।
খান ইউনিস শহরে বিমান হামলায় এক নারীসহ ২ জনের প্রাণহানি।
রাফাহ শহরে পৃথক হামলায় আরও ২ ফিলিস্তিনি নিহত।
গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি: এক নজরে হতাহতের সংখ্যা
গত ১৮ মার্চ ইসরাইলি বাহিনী আকস্মিক বিমান অভিযান চালায়, যেখানে:
৮৩০ জন নিহত
১,৮০০ জনের বেশি আহত
বন্দি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ
অক্টোবর ২০২৩ থেকে চলমান হামলায়:
৫০,২০০ ফিলিস্তিনি নিহত (যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু)
১,১৩,৭০০ জন আহত
বিশ্ব সম্প্রদায়ের নীরবতা ও ভবিষ্যতের শঙ্কা
গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকট সত্ত্বেও বিশ্ব সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং বিশ্বনেতারা একাধিকবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু ইসরাইলি বাহিনীর হামলা অব্যাহত রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “যদি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি না হয়, তাহলে গাজায় মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হতে পারে।”
গাজার সাধারণ মানুষ আর কতদিন এই দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করবে? বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো কি এবার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে? নাকি আরও হাজারো নিরপরাধ মানুষের রক্তে লাল হবে গাজার মাটি—এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বিশ্বজুড়ে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ