
ছবি: সংগৃহীত
সিগন্যাল অ্যাপে যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গোপন চ্যাট ফাঁস হওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এটি প্রকাশিত হওয়ার পর, ট্রাম্প প্রশাসন এই ঘটনার জন্য দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গকে দায়ী করেছে, যিনি ভুলক্রমে এই চ্যাটে যোগ দেওয়া একটি সাংবাদিক।
ফাঁস হওয়া তথ্য ও পরিণতি
‘দ্য আটলান্টিক’-এর প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মার্কিন সামরিক হামলার বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে হওয়া আলোচনা। প্রতিবেদনে সেগুলোর বিস্তারিত তথ্য, সেনাবাহিনীর সময়সূচি এবং অন্যান্য সংবেদনশীল বিষয় উঠে আসে, যা সামরিক গোপনীয়তার জন্য বিপজ্জনক হতে পারত। গোল্ডবার্গ বলেন, তিনি যখন অভিযোগ শুনেন যে কোনো গোপন তথ্য শেয়ার করা হয়নি, তখন তিনি সেটি প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেন।
এই ফাঁস হওয়া চ্যাটের ফলে ট্রাম্প প্রশাসন এখন দোষারোপ করছে গোল্ডবার্গকে, এবং তার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যাবাদী’ মন্তব্য করেছে। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই ঘটনায় কোনো গোপন তথ্য ফাঁস হয়নি। তবে, ট্রাম্পের মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ যে, এই ভুলটি ছিল গুরুতর, এবং বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তদন্ত চলছে।
প্রশাসনের পক্ষে ট্রাম্পের অবস্থান
ট্রাম্প প্রেস কনফারেন্সে বলেন, “এই ঘটনা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই, তবে এই অ্যাপটি খুব ভালো নয়।” তিনি সাংবাদিক জেফরি গোল্ডবার্গকে একেবারে ‘প্রতারক’ বলে অভিহিত করেন। ট্রাম্পের মতে, এই ভুলের জন্য তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ দায়ী। তিনি দাবি করেন, ওয়াল্টজই ‘এটি করতে বলেছেন’। তবে, এর পরও ট্রাম্প সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সমর্থন করেন, বিশেষ করে পিট হেগসেথের, যিনি চ্যাটে সামরিক কর্মকাণ্ডের কিছু তথ্য শেয়ার করেছিলেন।
সাংবাদিকের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর, গোল্ডবার্গের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের আক্রমণ আরো তীব্র হয়েছে। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট গোল্ডবার্গকে ‘অ্যান্টি-ট্রাম্প হেটার’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, মিডিয়া এ ঘটনা নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং আসল গল্প হলো ইয়েমেনে হুথি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সফল সামরিক অভিযান।
এদিকে, গোল্ডবার্গ এই অভিযোগগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, এই ঘটনার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ত্রুটি স্বীকার না করে, অন্যদের দোষারোপ করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসনকে নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি স্বীকার করা উচিত এবং সেটা ঠিক করার উদ্যোগ নিতে হবে।”
ক্যাবিনেট সদস্যদের ভূমিকা ও মন্তব্য
এ ঘটনা নিয়ে আরো কিছু মার্কিন কর্মকর্তা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও স্বীকার করেছেন যে, এই ঘটনায় ‘একটি বড় ভুল’ হয়েছে। তিনি বলেন, “একজন সাংবাদিককে গ্রুপে যোগ দেওয়া একটি বড় ভুল ছিল, এবং এটি সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
এদিকে, মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড জানিয়েছেন, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এই বিষয়টি তদন্ত করবে এবং খতিয়ে দেখবে কীভাবে একজন সাংবাদিক সেখানে যুক্ত হলেন।
ডেমোক্র্যাটদের প্রতিক্রিয়া
ডেমোক্র্যাটরা এই ঘটনায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের পদত্যাগ দাবি করেছে। তাদের মতে, এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য একটি অস্থির যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করা অনুচিত ছিল এবং এর ফলে মার্কিন কর্মকর্তাদের জীবন বিপদের মুখে পড়তে পারত।
এদিকে, গোল্ডবার্গের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি প্রমাণ করেছেন যে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভুলভাবে শেয়ার করা হয়েছিল এবং সেগুলো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
এই ঘটনায় পুরো আমেরিকা এখন এই বিষয়ে উত্তাল, এবং ট্রাম্প প্রশাসনের কী পদক্ষেপ নেবে তা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ