
ছবি: সংগৃহীত
গাজা উপত্যকার মানবিক অবস্থা এমন এক চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সেটিকে ‘পৃথিবীর দোযখ’ হিসেবে আখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছেন আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির প্রেসিডেন্ট মিরজানা স্পোলজারিক। গত ১১ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গাজায় বিদ্যুৎ, পানি ও খাবারহীন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে লাখো মানুষের জীবন।
তিনি বলেন, “আমরা এখন এমন একটি জায়গায় পৌঁছেছি যেখানে কোনো রসদ ঢুকছে না। মানুষ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, এবং জরুরি পরিষেবাগুলো আর বেশিদিন টিকবে না। হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না, অনেক জায়গায় কোনো ওষুধ নেই, সার্জারির যন্ত্রপাতি নেই। চিকিৎসকেরা খালি হাতে যুদ্ধ করছেন মৃত্যুর বিরুদ্ধে।”
গাজা বর্তমানে প্রায় পুরোপুরি অবরুদ্ধ। গত ২ মার্চ থেকে শুরু হওয়া নতুন ইসরায়েলি অবরোধের ফলে মানবিক সহায়তা কার্যত স্থগিত হয়ে গেছে। যদিও ইসরায়েল দাবি করছে, জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ২৫ হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, তবে বাস্তবে এই সহায়তা হামাস নয়, সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছাচ্ছে না বলেই আন্তর্জাতিক মহল অভিযোগ করছে।
রেডক্রস প্রধান বলেন, “গত ছয় সপ্তাহে কোনও রকম সরবরাহ গাজায় প্রবেশ করেনি। আমাদের সংগৃহীত রসদ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই ধারায় চললে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সকল অস্থায়ী হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাবে।”
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার তীব্রতা এবং অমানবিক অবরোধের কারণে গত এক মাসেই প্রাণ হারিয়েছে ১,৫০০-র বেশি ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৪ হাজার মানুষ। জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ইসরায়েল আবার নতুন করে আক্রমণ শুরু করে।
জাতিসংঘ বলছে, গাজা উপত্যকার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ ইতোমধ্যেই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং অঞ্চলটির ৬০ শতাংশ অবকাঠামো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, এবং সাহায্যের অভাবে থমকে যাচ্ছে মানবতার শেষ আশ্রয়।
রেডক্রসসহ অন্যান্য সাহায্য সংস্থা অবিলম্বে পূর্ণ মানবিক প্রবেশাধিকার ও যুদ্ধবিরতি দাবি করেছে। অথচ ইসরায়েল এখনও পর্যন্ত সেই দাবি মানছে না, বরং সামরিক আগ্রাসন জারি রেখেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ