
ছবি: সংগৃহীত
গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেও যুদ্ধ থামছে না। এবার যুদ্ধবিরতির একটি নতুন প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসে মধ্যস্থতাকারী মিশর। তবে ওই প্রস্তাবে 'নিরস্ত্রীকরণের' শর্ত থাকায় তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
এক জ্যেষ্ঠ হামাস কর্মকর্তা, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছিলেন, আলজাজিরাকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “মিশরীয় প্রস্তাবের মধ্যে ‘প্রতিরোধ নিরস্ত্রীকরণের’ বিষয়টি দেখে আমাদের প্রতিনিধি দল বিস্মিত হয়েছে। এটি একটি অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য শর্ত।”
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, “মিশরের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করে জানানো হয়েছে, অস্ত্রসমর্পণ ছাড়া ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির কোনো চুক্তি সম্ভব নয়। এর মানে দাঁড়ায়, আমাদের আত্মরক্ষার অধিকারকে পুরোপুরি অস্বীকার করা।”
এই অবস্থানে হামাস অনড়। তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তাদের অস্ত্র কোনো আলোচনার বিষয় নয়। যে কোনো যুদ্ধবিরতির ভিত্তি হতে হবে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন থামানো এবং দখলদার বাহিনীর পূর্ণ প্রত্যাহার।
হামাসের মতে, “গাজা একটি মুক্ত অঞ্চল নয় যেখানে ফিলিস্তিনিরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে। বরং এটি একটি অবরুদ্ধ ভূখণ্ড, যেখানে প্রতিদিনের জীবনই লড়াইয়ের নামান্তর। এই অবস্থায় ‘নিরস্ত্রীকরণ’ শব্দটি বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।”
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ইসরাইলি অভিযান চলছেই। এই অভিযানে প্রায় ৩৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই শিশু, নারী এবং বয়স্ক। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো একে "গণহত্যা-সদৃশ" আখ্যা দিলেও পশ্চিমা বিশ্বের একাংশ এখনো ইসরাইলের পাশে রয়েছে।
ইসরাইলের অবস্থানও খুব স্পষ্ট। তারা হামাসের সম্পূর্ণ পরাজয় ছাড়া যুদ্ধ থামাতে চায় না। তাদের ভাষায়, “যুদ্ধ শেষ হবে কেবল তখনই, যখন হামাস অস্ত্র ছাড়বে এবং গাজা ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে পুনর্গঠিত হবে।”
এই অবস্থায় মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ মধ্যস্থতায় কিছু সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতি হলেও, দীর্ঘমেয়াদে শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা ক্রমেই ম্লান হচ্ছে।
গাজাবাসীরা ইতোমধ্যে এক কথায় বলছে—এই যুদ্ধবিরতির নামে ‘আত্মসমর্পণের ফাঁদ’ তারা মানবে না। হামাসও সেই মনোভাবেই স্পষ্ট বার্তা দিলো—"স্বাধীনতা ছাড়া শান্তি নেই।"
বাংলাবার্তা/এমএইচ