
ছবি: সংগৃহীত
বাণিজ্যযুদ্ধে উত্তেজনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে প্রতিপক্ষের দুর্বল স্থানে আঘাত হানাই সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র হয়ে ওঠে—এবার সেই পথেই হাঁটল চীন। যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ ও চুম্বক রপ্তানি কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে বেইজিং। যার ফলে রীতিমতো অচলাবস্থার মুখে পড়তে যাচ্ছে ওয়াশিংটনের অটোমোবাইল, এভিয়েশন, সেমিকন্ডাকটর ও ডিফেন্স সেক্টর।
নতুন করে ঘোষিত চীনা রপ্তানি নীতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেমন ভারী বিরল ক্ষারমৃত্তিকা ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন চুম্বকের রপ্তানি সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই পদক্ষেপ ‘অ্যালার্ম বেল’ বেজে ওঠার মতো, কারণ দেশটির শিল্প খাত এই কাঁচামালের ওপর একচেটিয়াভাবে চীননির্ভর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এইসব উপাদানের বিকল্প উৎস গড়ে তুলতে হলে কয়েক বছর সময় লাগবে এবং বিপুল বিনিয়োগ দরকার হবে। অথচ বর্তমান উৎপাদন ও সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন নিরবিচারে এই উপকরণগুলোর ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারি, চৌম্বকচালিত মোটর, মিসাইল সিস্টেম, ফাইটার জেট, এমনকি স্টেলথ টেকনোলজিও এই উপাদান ছাড়া তৈরি করা অসম্ভব।
চীনের এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একপ্রকার কৌশলগত প্রতিক্রিয়া। কারণ ট্রাম্প প্রশাসন ২ এপ্রিল থেকে চীনের রপ্তানিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে, যার আওতায় রয়েছে উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চীন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন সক্ষমতাকে আঘাত করবে।
চীন সরকার ৪ এপ্রিল ছয়টি বিরল ভারী ক্ষারমৃত্তিকা—যা শুধুমাত্র চীনেই পরিশোধিত হয়—তার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এছাড়াও রপ্তানির জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে, যার মানে দাঁড়ায়, আপাতত যুক্তরাষ্ট্রে এই উপাদান প্রবেশ কার্যত বন্ধ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “বিশ্ব প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ এখন চীনের খনিজ নীতির ওপর নির্ভর করছে।” যুক্তরাষ্ট্র যদি বিকল্প উৎস না খুঁজে পায়, তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এবং সামরিক সরঞ্জাম প্রস্তুতকারীরা বাধ্য হবে উৎপাদন কমাতে।
যদিও ওয়াশিংটন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে গোপনে সরবরাহ শৃঙ্খলা রক্ষা ও বিকল্প সরবরাহকারীদের খোঁজে তৎপর হয়েছে।
এই মুহূর্তে বলা যায়—এটি শুধু খনিজ রপ্তানি বন্ধ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চীনের এক জোরালো চ্যালেঞ্জ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ