
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের আধিপত্য হ্রাসের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চীনা অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ঝেং রুনিউ। তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের ফলে ডলারের ক্ষমতা কমবে এবং এটি বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে তার অবস্থানকে দুর্বল করে তুলবে। বর্তমানে বিশ্বের নানা দেশ, বিশেষ করে চীন, রাশিয়া এবং ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) দেশগুলি ডলারের আধিপত্য কমানোর জন্য একত্রিত হতে পারে।
ঝেং রুনিউ, সাংহাইয়ের ইস্ট চায়না নরমাল ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর রাশিয়ান স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ, তার বিশ্লেষণে বলেছেন যে, মার্কিন শুল্ক যুদ্ধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করতে পারে, যা ডলারের আধিপত্য হ্রাসের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সহায়ক হবে। তাঁর মতে, এই পরিস্থিতি চীন, রাশিয়া এবং ব্রিকস দেশগুলোর জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে, যেখানে তারা ডলারের বদলে নিজেদের মুদ্রা বা অন্য কোনো মুদ্রা ব্যবহার করতে পারে। এই পরিবর্তনটি বৈশ্বিক বাণিজ্যিক লেনদেনকে নতুনভাবে নির্ধারণ করতে পারে এবং ডলারের প্রতি নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে পারে।
ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের ফলে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও তীব্র হয়ে ওঠেছে। এর মধ্যে, ট্রাম্প নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে আরও কঠোর করে তোলে। তবে তিনি পরে এই শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিতও করেছেন, যদিও চীনের বিরুদ্ধে তার শুল্ক ব্যবস্থা আরও ব্যাপক আকারে চালু রেখেছেন। এর ফলে, মার্কিন মুদ্রার প্রতি অন্যান্য দেশগুলোর আস্থা কমতে শুরু করেছে, যা ডলারের আধিপত্য হ্রাসের পথ প্রশস্ত করেছে।
এদিকে, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ব্যারি আইকেন গ্রিনও এক নিবন্ধে বলেছেন, ডলারের বিশ্বব্যাপী আধিপত্য দ্রুত অবসান হতে পারে। তার মতে, যদি যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের পরিত্যাগ করে, তাহলে ডলারের বৈশ্বিক অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই কথা বলেছেন ইরানের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ আব্দুল মাজিদ শেইখি, যিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আস্থা হারানোর সঙ্গে সঙ্গে ডলারের আধিপত্যের পতন আরও ত্বরান্বিত হবে। শেইখি আরও বলেন, ট্রাম্পের নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার ফলস্বরূপ তাদের মুদ্রার শক্তি কমে যাবে।
ডয়চে ব্যাংকের মুদ্রা গবেষণা বিভাগের প্রধান জর্জ সারাভ্লোসও এই বিষয়টি নিয়ে সতর্কতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইতিমধ্যেই ডলারের জন্য ক্ষতির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। বিশ্ব বাজার এখন রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের কাঠামোগত আকর্ষণ পুনর্মূল্যায়ন করছে এবং ডলারের আধিপত্য দ্রুত কমে যেতে পারে।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডলারের পতন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক বিষয় নয়, এটি রাজনৈতিক বিষয়ও। যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতাবাদী নীতি এবং তার মিত্রদের সাথে সম্পর্কের অবনতি এই পরিবর্তনটিকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে। ফলে, বিশ্ব অর্থনীতি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে, যেখানে ডলারের আধিপত্য কমে গিয়ে নতুন মুদ্রা ব্যবস্থাপনা ও বাণিজ্যিক নীতির সন্ধান পাওয়া যাবে।
বিশ্বের বিভিন্ন অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক শক্তি দেশগুলোর মধ্যে এই পরিবর্তনটি হতে চলেছে, যা ভবিষ্যতে মার্কিন মুদ্রার আধিপত্যের অবসান ঘটাতে পারে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় নতুন ধরনের গতি সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ