
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান ঘটতে পারে—এমন এক আশাব্যঞ্জক ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতির এই টানাপড়েন আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তা স্বীকার করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তিনি চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক কমাতে প্রস্তুত। এই বক্তব্যকে বিশ্লেষকরা বাণিজ্যযুদ্ধ নিরসনের পথে একটি সম্ভাব্য অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন।
বাজারে অস্থিরতা ও ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ
গত কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একে অপরের পণ্যের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করে আসছে। দুই পক্ষের এই শুল্ক যুদ্ধ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রবাহে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়। মূল্যবৃদ্ধি, সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন, এবং ক্রয়ক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিশ্বজুড়ে। শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, সাধারণ ভোক্তারাও এই শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “আমি চাই না শুল্ক আরও বাড়ুক। এক পর্যায়ে মানুষ আর কেনাকাটা করতে পারবে না।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমি শুল্ক কমিয়ে দিতে পারি। কারণ, মানুষকে কেনাকাটার সুযোগ দিতে হবে।”
শুল্ক আরোপ ও প্রতিক্রিয়া
চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসন আবারও বিভিন্ন দেশের, বিশেষ করে চীনের পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করে। যদিও ৯০ দিনের জন্য শুল্ক কার্যকর স্থগিত রাখা হয়, তবে চীনের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটে। চীনা পণ্যের ওপর ধাপে ধাপে শুল্ক বাড়িয়ে তা ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত নেওয়া হয়। এর জবাবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, যা ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছায়।
বিশ্ব অর্থনীতির এই দুই পরাশক্তির মধ্যে এমন শুল্কযুদ্ধ কেবল তাদের নিজস্ব আর্থিক পরিবেশেই নয়, পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য অনুযায়ী, দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের বাণিজ্য দ্বন্দ্ব আন্তর্জাতিক বাজারে বিনিয়োগ, সরবরাহচক্র এবং পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা সৃষ্টি করে।
চীনের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনার ইঙ্গিত
ট্রাম্প বৃহস্পতিবার আরও জানান, “চীন শুল্ক বিষয়ে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা চীনের সঙ্গে খুব ভালো একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারব।” তাঁর এই মন্তব্য বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
এই আলোচনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্সও। তারা সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, শুল্ক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নিয়মিত আলোচনা চলছে। যদিও এই আলোচনায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সরাসরি যুক্ত আছেন কি না, সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কিছু জানানো হয়নি।
এর আগে চীন নিজেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই ‘শুল্কের খেলায়’ আর প্রতিক্রিয়া না দেখানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। দেশটি জানায়, তারা আরও শুল্ক আরোপে আগ্রহী নয়, বরং আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান চায়।
সম্ভাব্য সমঝোতার দিকনির্দেশনা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক কমানোর ইঙ্গিত কেবল চীনের প্রতি একতরফা নরম মনোভাব নয়, বরং বিশ্বজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক চাপ এবং আমেরিকান জনগণের আর্থিক অসন্তোষ থেকে একটি কৌশলগত পলায়নও হতে পারে।
আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বাজার আস্থা ফিরিয়ে আনা ট্রাম্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ কারণে তিনি হয়তো চীনের সঙ্গে একটি গ্রহণযোগ্য সমঝোতায় পৌঁছাতে আগ্রহী। একইসঙ্গে, এই সমঝোতার মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে একজন দক্ষ চুক্তি-নেতা হিসেবে তুলে ধরতে চাচ্ছেন বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কভিত্তিক দ্বন্দ্ব যদি সত্যিই একটি ইতিবাচক সমঝোতার দিকে অগ্রসর হয়, তবে তা কেবল এই দুই দেশের জন্যই নয়, বরং পুরো বিশ্ববাণিজ্যের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক বার্তা হবে। যদিও এখনো চূড়ান্ত কোনো চুক্তির ঘোষণা আসেনি, তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যের পর আলোচনার আশাব্যঞ্জক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এখন বিশ্ব অপেক্ষা করছে, দুই অর্থনৈতিক শক্তির এই প্রতিযোগিতা কূটনৈতিক সমঝোতায় রূপ নেয় কি না।
বাংলাবার্তা/এমএইচ