
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। হামলাটি এতটাই ভয়াবহ যে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার আক্রমণ আরও শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন। এতে করে গাজায় চলমান মৃত্যু আর ধ্বংসের ধারা আরও তীব্র হয়েছে।
গাজায় নতুন হামলা এবং নিহতের সংখ্যা:
গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। শনিবার দিনভর গাজায় বোমাবর্ষণ চলাকালে আরও ৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ পর্যন্ত গাজার মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১,১৫৭ জনে, যা ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি আগ্রাসনের পর সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি।
তবে আহতের সংখ্যা আরও বেশি, প্রায় ১,১৬,৭২৪ জন, যাদের মধ্যে অনেকেই গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালের বিভিন্ন শয্যায় চিকিৎসাধীন। গত ৪৮ ঘণ্টায় ২১৯ জন আহত ফিলিস্তিনিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা আরও বেড়ে চলেছে।
হামাসের প্রতিরোধ এবং যুদ্ধবিরতির আলোচনা:
এদিকে, হামাস আবারো ইসরাইলি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরাইলের সাথে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পরিবর্তে, হামাস বন্দিদের মুক্তি এবং সংঘাতের অবসানের জন্য আরও কঠোর শর্ত দিয়েছে। এতে ইসরাইল গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তবে, হঠাৎ করেই হামাস জানায় যে, তাদের যোদ্ধারা ইসরাইলি-মার্কিন বন্দি এডান আলেকজান্ডারকে ধরে রাখা প্রহরীর লাশ উদ্ধার করেছে। যদিও, বন্দির ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
আন্তর্জাতিক চাপ এবং মানবিক বিপর্যয়:
ইসরাইলের হামলা চলছে গাজা থেকে ফের বিমান হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে, যা গত মার্চ মাসে এক নতুন পর্যায়ে প্রবাহিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ সত্ত্বেও, গাজার অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলের বর্বর হামলার কারণে গাজার প্রায় ৮৫% ফিলিস্তিনি তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, এবং গাজার ৬০% অবকাঠামো ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া নতুন হামলায় ১,৭৮৩ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪,৭০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ইসরাইলের গণহত্যামূলক আগ্রাসন:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলোও ইসরাইলের হামলাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইসরাইলি আক্রমণের পর, গাজার অধিকাংশ মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন, যেখানে উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
বিশ্বের অন্যান্য দেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চরম প্রতিবাদ সত্ত্বেও, ইসরাইলের আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে, যা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ব্রেক করেছে।
প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যত আশঙ্কা:
বর্তমানে গাজায় মানবিক বিপর্যয় ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, আর এই পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হবে যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ কার্যকর না হয়। ফিলিস্তিনিদের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে এবং গাজার বেসামরিক জনগণ মানবাধিকার ও শান্তি প্রত্যাশা করে যাচ্ছেন।
গাজার অবস্থা এখন এমন এক সংকটময় পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে, যা শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য নয়, পুরো বিশ্বে মানবিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
গাজার পরিস্থিতি এবং ইসরাইলি হামলার পরবর্তী অগ্রগতি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত এই সংঘাতের অবসান এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছানো। বিশ্ব নেতাদের উচিত, তারা যেন দ্রুত একটি শান্তি চুক্তির দিকে পদক্ষেপ নেন।
বিশ্ব রাজনীতি ও গাজায় মানবিক সহায়তার জন্য চাপ:
এ অবস্থায়, গাজার মানবিক সংকট মোকাবেলা করার জন্য জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে গাজার জনগণের ওপর ক্রমবর্ধমান ইসরাইলি আক্রমণ আন্তর্জাতিক শান্তির পথে আরও বড় বাধা সৃষ্টি করছে।