
ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর টানা অবরোধ, বিমান হামলা এবং অবর্ণনীয় মানবিক সংকটের মধ্যেও হাল ছাড়ছে না ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। বরং ইসরায়েলি আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আরও জোরদার করতে সামরিক শাখা ইজ্জউদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেড গাজা উপত্যকার প্রায় ৩০ হাজার তরুণকে তাদের দলে নিয়োগ দিয়েছে। রোববার (২০ এপ্রিল) সৌদি গণমাধ্যম আল-আরাবিয়াসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সূত্রের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরাইলের প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিয়োগপ্রাপ্ত তরুণদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ পূর্বে আল-কাসসাম ব্রিগেডের গোপন সামরিক প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এতে বোঝা যাচ্ছে, হামাস আগেভাগেই সম্ভাব্য প্রতিরোধ যোদ্ধা তৈরির কর্মসূচি চালিয়ে আসছিল। যদিও এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম যুদ্ধ শুরুর আগে হয়েছিল, নাকি চলমান সংঘাতের মধ্যে, তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি।
এই তরুণ যোদ্ধাদের মধ্যে ‘গেরিলা কৌশল’, ‘রকেট হামলা’, ‘বিস্ফোরক স্থাপন’ ইত্যাদি বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান থাকলেও—প্রতিবেদন অনুসারে—তাদের অনেকের উচ্চপর্যায়ের সামরিক দক্ষতা এখনও সীমিত। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তাদের বাস্তব প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের প্রতিরোধ শক্তি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
অস্ত্র সংকটে কৌশলী পদক্ষেপ
একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিনের অবরোধ ও যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে হামাসের অস্ত্র মজুদের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ড্রোন, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং উচ্চ প্রযুক্তির বিস্ফোরক তৈরির উপকরণে সংকট প্রকট। তবে এতে তারা থেমে নেই। বরং তাদের ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিট আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) এর অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ এবং যুদ্ধবর্জ্য সংগ্রহ করে সেগুলো পুনঃব্যবহার শুরু করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বর্জ্যকে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে তারা ভূমি-ভিত্তিক আইইডি, মাইন এবং সীমিত পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহার করছে। এতে বোঝা যায়, হামাস তাদের যুদ্ধ সক্ষমতা ধরে রাখতে রিসাইক্লিং প্রযুক্তিকেই অস্ত্র উৎপাদনের বিকল্প উৎস হিসেবে বেছে নিচ্ছে।
যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবারও পূর্ণমাত্রার সংঘাত
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সাম্প্রতিক রূপ নেয় মার্চের মাঝামাঝি থেকে, যখন জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তি ভেঙে যায়। এরপর থেকেই উভয় পক্ষের মধ্যে পুনরায় ভারী সংঘাত শুরু হয়। বিশেষ করে গাজার কেন্দ্র এবং দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
গাজা উপত্যকায় রোববার ২৫ জন নিহত
গাজা স্ট্রিপজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় বেসামরিক প্রাণহানির ঘটনা আরও বেড়েছে। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে জানান, রোববার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ২৫ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে, যা ইসরায়েলের আক্রমণের মানবিক মূল্যকে আরও সুস্পষ্ট করছে।
বোমা বর্ষণ, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে যাওয়া এবং জরুরি উদ্ধার তৎপরতার অপ্রতুলতায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো ইতোমধ্যেই ধ্বংসপ্রাপ্ত, ফলে আহতদের চিকিৎসা করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের অব্যাহত বার্তা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ৩০ হাজার তরুণ যোদ্ধাকে অন্তর্ভুক্ত করে হামাস একটি সুসংগঠিত প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও সামরিক দক্ষতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে, কিন্তু সংখ্যাগত শক্তি, স্থানীয় মাটি এবং জনগণের সমর্থন তাদের গেরিলা যুদ্ধকে একটি দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে পরিণত করতে পারে।
তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার—ইসরায়েলের চাপ, অবরোধ এবং আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আত্মসমর্পণ নয়, প্রতিরোধই একমাত্র পথ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ