
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে, তা ক্রমেই আরও গভীর হচ্ছে। জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে বন্দুকধারীদের হামলার পর ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা পাকিস্তানকে উত্তেজিত করে। দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা ও রাজনৈতিক কৌশলের পালাবদল এখন অনেক বড় আকার ধারণ করেছে, এবং এই উত্তেজনা তীব্র হওয়ায় বিশ্লেষকরা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের অবনতির সূচনা:
পেহেলগাঁওয়ে ভারতের পর্যটকদের ওপর হামলার পর, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে। ভারত এই হামলার পর পাকিস্তানের ওপর চাপ তৈরি করতে সিন্ধু পানি চুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষত পাকিস্তান যখন পানি চুক্তির প্রতি তার অধিকার রক্ষার বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নেয়।
সিন্ধু পানি চুক্তি ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যার আওতায় পাকিস্তানকে সিন্ধু নদী এবং তার শাখা নদীগুলোর পানি ব্যবহার করার অধিকার দেয়া হয়েছিল। পাকিস্তান এই চুক্তি একটি অগ্রহণযোগ্যভাবে পরিবর্তন বা বাতিল করার চেষ্টা কখনও মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে।
পাকিস্তান, চুক্তি এবং যুদ্ধর হুঁশিয়ারি:
পাকিস্তান, চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু নদীর পানি প্রবাহে ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তকে একেবারে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করছে এবং এমনকি তা 'যুদ্ধ' হিসেবে গণ্য করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। পাকিস্তান সরকারের দাবি, তাদের কৃষি ব্যবস্থার ৯০ শতাংশই এই পানির ওপর নির্ভরশীল, এবং যদি ভারতের পক্ষ থেকে পানি সরবরাহ বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে তার পাল্টা জবাব দেওয়া হবে ‘যুদ্ধ’ হিসেবে।
বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় তহবিল তৈরি হলেও, দুই দেশের মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি যথাযথভাবে কার্যকর থাকলেও এখন ভারতের একতরফা পদক্ষেপ পাকিস্তানের জন্য বড় সংকটে পরিণত হয়েছে।
সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি ও পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার:
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের (এনএসসি) বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের পানির প্রবাহ বন্ধ করা হলে তা যুদ্ধের শামিল হবে এবং এর জন্য তারা ‘পূর্ণ শক্তি দিয়ে’ প্রতিক্রিয়া জানাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তান এমন পরিস্থিতিতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্তও নিতে পারে। একটি বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, “যদি ভারত পানি সরবরাহ বন্ধ করার জন্য কোনও বাঁধ বা জলাধার তৈরি করে, তাহলে পাকিস্তান তা ধ্বংস করতে পারমাণবিক হামলা চালাতে দ্বিধা করবে না।”
আরেকটি বিশ্লেষক বলেন, “পানির অধিকার হরণ করা পাকিস্তানের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে, তাই পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব এক মুহূর্ত দেরি না করেই ব্যবস্থা নেবে এবং সেই স্থানে হামলা করবে যা পানির প্রবাহকে বিপন্ন করবে।” পাকিস্তান এমনকি পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহারকেও একটি উপায় হিসেবে বিবেচনা করছে, যদি ভারতের কোনও পদক্ষেপ তার পানি সরবরাহকে হুমকির মুখে ফেলে।
ভারতীয় পক্ষের প্রতিক্রিয়া:
ভারতের পক্ষে, এই চুক্তির স্থগিত করার সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, তারা 'স্থগিত' শব্দটি ব্যবহার করেছেন, 'বাতিল' নয়। এর মাধ্যমে তারা পাকিস্তানের কাছে একটি সংকেত দিতে চায়—যদি পাকিস্তান তাদের নিরাপত্তা উদ্বেগের সমাধান দেয়, তাহলে চুক্তি আবার কার্যকর হতে পারে।
ভারতের সাবেক সিন্ধু পানি কমিশনার জামাত আলী শাহ বলেন, “ভারতের এই পদক্ষেপ আসলে জনমত শান্ত করার জন্য একটি কৌশল। কেননা, এই চুক্তি একতরফাভাবে বাতিল করা সম্ভব নয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি যা দুই দেশের পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে পারে।” তিনি আরও যোগ করেন, “ভারত হয়তো চুক্তি স্থগিত করে ভবিষ্যতে পাকিস্তানের সাথে আলোচনা করতে চাইছে।”
বিশ্ববাসীর প্রতিক্রিয়া এবং সংকটের সম্ভাব্য পরিণতি:
বিশ্ববাসী এখন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, কীভাবে এই চুক্তির ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে, যাতে কোনো ধরনের সামরিক উত্তেজনা বা পরমাণু হামলার ঝুঁকি সৃষ্টি না হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এই উত্তেজনা আরও বাড়ে, তা শুধু দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্য এক বড় সংকটের সূচনা হতে পারে।
বিশ্ব নেতারা আশা করছেন, কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা একতরফা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই বিরোধের অবসান ঘটানো সম্ভব হবে, এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত হবে। তবে, যদি পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, তাহলে দুই দেশের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধের শঙ্কা দূর করা যাবে না, যা গোটা পৃথিবীর জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে।
বিশ্লেষকদের সতর্কবার্তা:
বিশ্লেষকরা বলেছেন, এই উত্তেজনা যদি আরও বাড়ে, তবে তা পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে তুলতে পারে। একটি বড় যুদ্ধের সূচনা হতে পারে, এবং পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহারের ফলে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হতে পারে।
বিশ্ব নেতারা এখন দুই দেশের মধ্যকার শান্তিপূর্ণ আলোচনা এবং কূটনৈতিক পন্থার মাধ্যমে এই উত্তেজনা প্রশমিত করার চেষ্টা করছেন। তারা দাবি করছেন যে, একতরফাভাবে কোনো দেশকে চুক্তি লঙ্ঘন করার সুযোগ দেয়া উচিত নয় এবং দুই দেশের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন।
পরিণতি কি?
এই উত্তেজনার পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশ যদি নিজেদের সামরিক শক্তি ব্যবহার করে, তাহলে তা শুধু দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্য এক বড় সংকটের সূচনা হতে পারে। বিশ্ব নেতারা আশা করছেন, কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা একতরফা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই বিরোধের অবসান ঘটানো সম্ভব হবে, এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ