
ছবি: সংগৃহীত
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুরোনো বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর সীমান্তে আবারও শুরু হয়েছে গোলাগুলির পাল্টাপাল্টি, যা দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। শুক্রবার রাতে (২৫ এপ্রিল) পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতীয় ভূখণ্ডে গুলি চালালে জবাবে পাল্টা গুলি চালায় ভারতীয় বাহিনী। দুই পক্ষের এমন সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সীমান্তজুড়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর নিশ্চিত করেনি দুই দেশের কর্তৃপক্ষ।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শুক্রবার রাতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় (LoC) এবং লাদাখ সীমান্ত বরাবর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে। তারা ভারী অস্ত্র থেকে গোলাবর্ষণ শুরু করে, যার ফলে ভারতীয় সেনারা পাল্টা প্রতিরোধমূলক গুলি চালায়।
এই নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে কয়েকবার কাশ্মীর সীমান্তে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটল। এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতেও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছিল। ওই সময়ও গোলাবর্ষণের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। সীমান্তের এই ক্রমাগত উত্তেজনা দুই দেশের সম্পর্ককে ফের ২০১৯ সালের মতো সংঘাতময় অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে আন্তর্জাতিক মহলে।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ভারত-পাকিস্তান বিষয়ে মুখ খুলেছেন। শুক্রবার মার্কিন সময় সন্ধ্যায় ‘এয়ারফোর্স ওয়ানে’ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন,
“কাশ্মীর ইস্যু তো শতাব্দীপ্রাচীন যুদ্ধের ইতিহাস। ভারত-পাকিস্তান নিজেরাই কোনো না কোনোভাবে এটি সমাধান করে নেবে।”
তিনি আরও বলেন, তিনি ভারতেরও ঘনিষ্ঠ, পাকিস্তানেরও। তিনি চান দুই দেশই শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যার সমাধান করুক। যদিও তিনি স্পষ্টভাবে কোনো পক্ষ নেননি বা মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেননি, তবে এটিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক ধরনের বার্তা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, “কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াশিংটনের নির্দিষ্ট কোনও অবস্থান না থাকলেও আমরা দ্রুত পরিবর্তনশীল ঘটনাপ্রবাহ নজরে রাখছি।”
এছাড়া, যুক্তরাজ্য সরকার তাদের নাগরিকদের ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে। তারা বলেছে, এই অঞ্চলে আকস্মিক সংঘর্ষের ঝুঁকি থাকায় নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য এ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে, ইরান নিজেদের মধ্যস্থতা ভূমিকা রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন,
“আমরা আমাদের দূতাবাসের মাধ্যমে এই কঠিন সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বোঝাপড়ার পথ তৈরি করতে চাই। আমাদের কাছে প্রতিবেশী দুই দেশের স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ।”
ইরান মনে করে, এই মুহূর্তে পারস্পরিক আস্থার পরিবেশ তৈরি করে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমিত করা সম্ভব।
এদিকে শুধু সীমান্তে গোলাগুলিই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়েও চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বাসভবনে শুক্রবার অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে সিন্ধু চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জলশক্তিমন্ত্রী সি আর পাতিল। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, “সিন্ধুর এক ফোঁটা পানিও পাকিস্তান পাবে না, এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে ভারত।”
এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান। তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, “ভারত যদি পানির প্রবাহ আটকে দেয়, তাহলে সেটিকে যুদ্ধের মতো অবস্থান হিসেবেই বিবেচনা করা হবে।”
এছাড়া, ভারত যদি সত্যিই পানির প্রবাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে সেটি সিন্ধু পানি চুক্তির প্রধান পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকা বিশ্বব্যাংককে না জানিয়ে নেয়া হচ্ছে, এমন দাবি করেছে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দু।
তবে ভারতীয় এক সরকারি কর্মকর্তার দাবি, পাকিস্তানকে আগেই অবহিত করা হয়েছিল, ফলে আলাদাভাবে বিশ্বব্যাংককে জানানো বাধ্যতামূলক ছিল না।
একদিকে কাশ্মীর সীমান্তে গোলাগুলি, অন্যদিকে পানিবণ্টন নিয়ে হুমকি-পাল্টা হুমকি—এই মুহূর্তে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক চরম উত্তেজনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যদিও কিছু কিছু মধ্যস্থতার ইচ্ছা দেখা যাচ্ছে, তবে দুই দেশের জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক পরিবেশ এবং অভ্যন্তরীণ চাপে আপাতত দ্রুত সমাধানের সম্ভাবনা অনিশ্চিত।
বাংলাবার্তা/এমএইচ