
ছবি: সংগৃহীত
ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর বন্দর আব্বাসে শনিবার (২৬ এপ্রিল) ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, যা দেশটির জনগণের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এপি এবং ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় বিকেলে বন্দর আব্বাসের প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র রাজাঈ বন্দরের একটি কনটেইনার টার্মিনালে হঠাৎ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের মাত্রা এতটাই প্রবল ছিল যে, পুরো শহরে তা অনুভূত হয়। এতে কাঁপুনি ধরায় আশপাশের বসবাসকারী ও কর্মরত মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিস্ফোরণের পরপরই আকাশে ঘন কালো ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলী উঠে যায়, যার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গেছে।
রাজাঈ বন্দরের একটি কনটেইনার থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয় বলে জানিয়েছেন প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার কর্মকর্তা মেহরদাদ হাসানজাদেহ। তিনি ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "দুর্ঘটনার পর জরুরি উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা দ্রুত খালি করারও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যাতে আর কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটে।"
তবে হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিসংখ্যান এখনো স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি। স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। অনেককে আহত অবস্থায় চিকিৎসা কেন্দ্রেও নেয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বন্দরটি ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম, যেখানে বিশাল পরিসরে কনটেইনার পরিবহন পরিচালিত হয়। শুধু তাই নয়, রাজাঈ বন্দরে তেল ট্যাংকার এবং অন্যান্য পেট্রোকেমিক্যাল সুবিধাও রয়েছে। এ ধরনের স্থাপনার উপস্থিতির কারণে বিস্ফোরণের ভয়াবহতা আরও বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, যদি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তাহলে তা নিকটবর্তী তেল বা রাসায়নিক সংরক্ষণ স্থাপনাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার ফলে আরো বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে।
বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি। দুর্ঘটনাটি নাশকতাজনিত নাকি কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যের অজ্ঞাত কারণে ঘটেছে তা নির্ধারণে তদন্ত শুরু হয়েছে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিক আলামত সংগ্রহ করছে এবং বিস্ফোরণের উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধান চালাচ্ছে।
এদিকে, বন্দর আব্বাসের স্থানীয় প্রশাসন নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। শহরবাসীকে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি এলাকায় না যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরগুলোকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
বিস্ফোরণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বন্দর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে যান চলাচল কমে যায় এবং বহু দোকানপাট তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বাসিন্দাদের অনেকেই বাসা-বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে যেতে শুরু করেন।
ইরানে সম্প্রতি বিভিন্ন স্থাপনায় দুর্ঘটনা এবং বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল এবং সামরিক স্থাপনাগুলোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনার সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সর্বশেষ বন্দর আব্বাসের এই বিস্ফোরণ নিয়ে নতুন করে নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট এবং উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে কাজ করছে। দমকল বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, উদ্ধারকাজ ও আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য বড় পরিসরে অভিযান চালানো হচ্ছে এবং পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রাজাঈ বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে। একইসঙ্গে দেশের অন্যান্য প্রধান বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজাঈ বন্দর ইরানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টন পণ্য এখান দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হয়। তাই এ বন্দরে এমন একটি দুর্ঘটনা দেশটির অর্থনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ