
ছবি: সংগৃহীত
কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী হামলার ঘটনাকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। হামলার পেছনে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের জবাবে ইসলামাবাদ স্পষ্ট করে জানিয়েছে, তারা নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক তদন্ত চায়। পাকিস্তান সরকার বলছে, তারা যে কোনো স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত এবং এই ইস্যুতে নিজেদের বিরুদ্ধে ভারতীয় অভিযোগ অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) অ্যাবোটাবাদের সামরিক একাডেমিতে একটি অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, "কাশ্মীরে সাম্প্রতিক হামলার তদন্তে যদি আন্তর্জাতিকভাবে নিরপেক্ষ কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়, পাকিস্তান তাতে অংশ নিতে পুরোপুরি প্রস্তুত।" তিনি আরও যোগ করেন, "পাকিস্তান দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত রক্ষায় সবসময় প্রস্তুত রয়েছে এবং ২০১৯ সালের ভারতের আগ্রাসন রুখে দেওয়ার ঘটনা তার উদাহরণ।"
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, "কাশ্মীরে ২৬ জন পর্যটকের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তদন্ত হওয়া জরুরি। পাকিস্তান এতে আন্তর্জাতিক তদন্তকারীদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।" আসিফ আরো সতর্ক করে বলেন, "আমরা চাই না এই সহিংসতার আগুন সারা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ুক। কারণ, তা পুরো দক্ষিণ এশিয়াকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।"
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ভারতের কাশ্মীরে এক ভয়াবহ হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। ভারত সরকার সরাসরি পাকিস্তানকে এ হামলার জন্য দায়ী করে আসছে। দিল্লির দাবি, পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো এ হামলায় জড়িত। তবে পাকিস্তান শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং বলছে, হামলায় তাদের কোনো ভূমিকা নেই।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। ভারত একতরফাভাবে 'ইনডাস ওয়াটার চুক্তি' সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে, যেটি দুই দেশের পানিবণ্টনের দীর্ঘদিনের একটি ঐতিহাসিক চুক্তি। জবাবে পাকিস্তান ভারতের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। এই পদক্ষেপে দক্ষিণ এশিয়ার আকাশপথ এবং নদী-সম্পর্কিত কূটনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, "কাশ্মীরের হামলাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে ভারত এখন পানিচুক্তি স্থগিত করেছে। তারা মূলত নিজেদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে এসব করছে। কোনো তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই তারা আমাদের শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক।"
এদিকে, 'কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স' নামের একটি সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তবে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর দাবি, এই সংগঠনটি আসলে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তইবা এবং হিজবুল মুজাহিদিনের একটি শাখা সংগঠন।
পাকিস্তান এই অভিযোগকেও সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। খাজা আসিফ বলেন, "লস্কর-ই-তইবা এখন নিষ্ক্রিয়। পাকিস্তানে তাদের কোনো সংগঠিত অবকাঠামো নেই। যারা জীবিত আছে, তারা হয় গৃহবন্দি, নয়তো হেফাজতে আছে। তাদের কোনো সক্রিয় কার্যক্রম চলছে না।"
বিশ্লেষকরা বলছেন, কাশ্মীরে চলমান অস্থিরতা দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ককে আরও অবনতি ঘটাতে পারে। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত হস্তক্ষেপ না করে, তবে দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেতে পারে, যার প্রভাব গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় পড়বে।
এই মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানের উভয়পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড়। আন্তর্জাতিক মহলের নজর এখন কাশ্মীর পরিস্থিতির ওপর। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এই উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ইসলামাবাদ বারবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, যেন নিরপেক্ষভাবে তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করা হয় এবং পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকা হয়।
প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তপ্ত কাশ্মীর ইস্যু আবারও কি বড় সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, নাকি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আসবে?
বাংলাবার্তা/এমএইচ