
ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেছেন, ভারত যদি পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করে, তবে পাকিস্তান যেকোনো মূল্যে নিজেদের পানির অধিকার রক্ষা করবে। পাকিস্তান পানি নিয়ে ভারতের কোনো অন্যায় প্রয়াস মেনে নেবে না বলে তিনি স্পষ্টতঃ জানিয়ে দিয়েছেন।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সাথে একটি টেলিফোন আলোচনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ এসব কথা বলেন। এসময় তিনি পাকিস্তানের সর্বাত্মক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “পাকিস্তান তার পানির অধিকার রক্ষা করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।” পাশাপাশি, তিনি এটিও নিশ্চিত করেন যে, পাকিস্তান সকল ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রতিষ্ঠার পক্ষে, যেখানে কোনো দেশ বা জাতি একে অপরের ওপর নির্যাতন বা আক্রমণ না করবে।
এদিকে, ভারতের কাশ্মীরে পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগ তোলার পর, পাকিস্তান জানিয়েছে যে, এই হামলায় তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। পহেলগামে হামলার ঘটনায় ২৬ জন নিহত হন এবং এর পরেই ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। ভারত দাবী করেছে, পাকিস্তান এই হামলার পেছনে সহায়তা দিয়েছে, যার ফলে তারা ১৯৬০ সালের সিন্ধু নদ পানি চুক্তি স্থগিত করেছে।
শাহবাজ শরীফ ভারতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদের শিকার। গত দুই দশক ধরে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের সর্ববৃহৎ ক্ষতিগ্রস্ত দেশ, যেখানে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি এবং কোটি কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে। তিনি ভারতীয় পক্ষের অভিযোগের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন, "পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য প্রস্তুত।"
ভারতীয় কাশ্মীরের পহেলগাম হামলার পর, পাকিস্তান আবারও স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, তাদের দেশে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানো হয়নি এবং তারা শান্তিপূর্ণ আলোচনা ও সমাধান চায়। এসময় শাহবাজ বলেন, “পাকিস্তান কাশ্মীরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে এবং জাতিসংঘের প্রস্তাবনা অনুসারে তাদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে।”
পাকিস্তান সরকার সিন্ধু নদ পানি চুক্তি নিয়ে ভারতের পদক্ষেপের ব্যাপারে কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানিয়েছে, যদি ভারত পানি আটকে দেয়, তবে এটি এক ধরনের যুদ্ধের ঘোষণা হিসেবে গণ্য হবে। পাকিস্তান দাবি করছে, পানির উপর চাপ সৃষ্টি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, এবং তারা দেশের পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোনোরকম ছাড় দিবে না।
এদিকে, পানি সংকটের পাশাপাশি কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও আন্তর্জাতিক মহলে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তান সরকার ইরানের ভূমিকা নিয়ে আশাবাদী, যদি ইরান পাকিস্তান-ভারত সম্পর্কের শান্তিপূর্ণ সমাধানে অবদান রাখতে চায়। শাহবাজ শরীফ বলেছেন, “আমরা শান্তি চাই, এবং ইরান যদি এই শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে চায়, আমরা তার জন্য উন্মুক্ত।”
এ ঘটনায় পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা জানিয়েছে, দেশটি বরাবরই কাশ্মীরি জনগণের পক্ষে ছিল এবং তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লড়াই চালিয়ে যাবে। পাকিস্তানের এই অবস্থান বিশ্বে এক শক্তিশালী বার্তা পাঠাচ্ছে যে, পানি একটি প্রাকৃতিক সম্পদ এবং তা কোনভাবেই কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ