
ছবি: সংগৃহীত
গত কয়েক দিন ধরে জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে, এবং এ পরিস্থিতি সামরিক সংঘাতে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র, এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়ে আসলেও, ভারত সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।
এ রিপোর্টে বলা হয়েছে, কাশ্মিরে হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতোমধ্যে বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি দেশের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে এই ফোনালাপের উদ্দেশ্য কেবল আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রার্থনা করা নয়, বরং পাকিস্তানে সামরিক হামলার যৌক্তিকতা তুলে ধরা ছিল। এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মোদি সরাসরি পাকিস্তানকে আক্রমণ করার কথা বলেননি, তবে "সন্ত্রাসী আস্তানাগুলো ধ্বংস" করার এবং "কঠোর শাস্তি" দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সীমান্তে গত তিন রাত ধরে টানা গোলাগুলি হয়েছে, এবং কাশ্মিরে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে। তাদের দাবি, সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতদের খুঁজে বের করার জন্য অভিযান চলছে। পাশাপাশি, ভারতের পানি প্রবাহ বন্ধ করার ঘোষণাও পাকিস্তানের প্রতি চাপ সৃষ্টি করার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পাকিস্তান, পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলো স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে বিশেষ করে কাশ্মির সীমান্তে যুদ্ধবিরতির চুক্তি অন্যতম। সঙ্গতিপূর্ণভাবে, ভারতে মুসলিম বিরোধী মনোভাবও বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং কাশ্মিরি শিক্ষার্থীরা ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
হামলার পাঁচ দিন পরেও ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাম ঘোষণা করেনি, তবে তাদের দাবি, হামলাকারীরা পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত। এ সম্পর্কে কূটনীতিকদের বক্তব্য, ভারতের পদক্ষেপের পেছনে প্রমাণের অভাব দুটি সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়— হয় তারা আরও তথ্য সংগ্রহ করবে, নয়তো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ছাড়াই পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতকে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে সমর্থন জানিয়েছে, তবে তাদের সক্রিয় ভূমিকা কেমন হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। বিশেষ করে, ট্রাম্প প্রশাসনের দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কিত কার্যক্রম এখনও সীমিত। এ পরিস্থিতিতে, ভারতের সামরিক পদক্ষেপ আরও দ্রুত গতি লাভ করতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, উভয় দেশই সামরিক সংঘাতে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের সক্ষমতা অতিরঞ্জিত করে দেখাচ্ছে, এবং এতে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এমনকি, ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেনন জানিয়েছেন, মোদি সরকারের জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। তবে তিনি আশাবাদী যে, উভয় পক্ষই সংঘাতকে নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখতে চায়।
এদিকে, একজন কূটনীতিক সতর্ক করেছেন, "অতীতের রেকর্ডের ওপর নির্ভর করে কি পরমাণু অস্ত্রধারী প্রতিবেশীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করবেন?" এর মাধ্যমে তিনি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যা দ্রুত একটি বড় সংকটের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে, ভারত এবং পাকিস্তান উভয়ই এখন পরমাণু শক্তিধর দেশ হওয়ায় সংঘাতের ফল হতে পারে অত্যন্ত বিপজ্জনক, এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে চাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ