শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল
ঢাকা: ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩! ঢাকার পিলখানাকাণ্ডের যেন চোখের পলকে ১৪ বছর। বিডিআর সদর দফতরে নৃশংস হত্যা করা হয়েছিল সেনাকর্মকর্তাদের। সেই শহীদদের প্রতি শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বনানী সামরিক কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি এবং সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ও নিহতের স্বজনরা।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব প্রথমে শ্রদ্ধা জানান। পরে শ্রদ্ধা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেনাবাহিনী প্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আব্দুল হান্নান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসানসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, হত্যাকাণ্ডের দিন বিএনপি চেয়ারপারসনের গতিবিধি ছিল সন্দেহজনক। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত রায় কার্যকরের অপেক্ষায় রয়েছে। এ বছরের মধ্যেই এ মামলার চূড়ান্ত রায় কার্যকর করতে পারবো বলে আমরা প্রত্যাশা রাখি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠেন না। কিন্তু সেদিন তিনি সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে গাড়িতে করে দুদিনের জন্য কোথায় যেন চলে যান। এ ঘটনা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও সরকারকে উৎখাতের চক্রান্ত ছিল।’
সরকার ক্ষমতা নেওয়ার ৫০ দিনের মাথায় এ ধরনের ঘটনা সরকারকে উৎখাত করার প্রচেষ্টা বলে উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগ সরকারকে পছন্দ করে না, যারা আওয়ামী লীগ সরকারকে দেখতে চায়নি তাদের ষড়যন্ত্রের অংশই এ ধরনের ঘটনা।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের শ্রদ্ধা জানানোর শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নৃশংস হত্যাকাণ্ডের যথাযথ বিচার স্বজনরা পেয়েছেন। তারা যেন এ বিচারের সন্তুষ্ট হতে পারেন এ বিষয়ে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাবো।’
তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে বেশিরভাগ শহীদ পরিবারের ধারণা, বিচার প্রক্রিয়া ও তদন্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা নেই। এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো– এর আগে কিছু জানা গেল না, এটা অবশ্যই অস্বাভাবিক। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কি কোনও কিছুই আঁচ করতে পারেনি এসব বিষয়ে? আর তারা যদি আঁচ করতে না পারে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা প্রচণ্ডভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। এ ঘটনার উদ্দেশ্য ছিল মূলত সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়া। এ ঘটনার তদন্ত যেভাবে হওয়া দরকার ছিল, আমাদের এখানে সেটি সংঘটিত হয়নি। সুষ্ঠু তদন্তের মধ্য দিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের এবং এর পেছনে যারা ছিলেন তাদের বের করে আনতে যে তদন্ত প্রক্রিয়া দরকার ছিল তা হয়নি। পত্রপত্রিকায় দেখতে পেয়েছি সেনাবাহিনী যে প্রতিবেদন তৈরি করেছিল– তার পূর্ণাঙ্গ যে চেহারা তার কোনও কিছুই দেশবাসী জানতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘বিদ্রোহ হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে বিচার হয়েছে। সাজা হয়েছে কিছু মানুষের, কিছু মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাত হাজার সৈনিক, যারা দাবি করেন সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ তাদের মামলার শুনানি এখনও শেষ করা হয়নি। আমি দাবি করবো, যে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, বিচার সংক্রান্ত যে সমস্যাগুলো রয়েছে, অতি দ্রুত সেগুলো সম্পাদন করে একটি সমাধান করা উচিত।’
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিদ্রোহের নামে হত্যা করা হয় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলায় ৮৪৬ জনকে আসামি করা করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারিক আদালত। আর ২০১৭ সালে হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। মামলায় ১৩৯ জনকে ফাঁসি, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট পিলখানা হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। তবে রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের করা আপিল শুনানি শুরু না হওয়ায় হত্যা মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি আজও।