সংগৃহীত ছবি
ঢাকা: রাজধানীর বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যাপ্ত অনুদান দেবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার (৫ এপ্রিল) রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন- গোড়ান খেলার মাঠের উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কালে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
মেয়র তাপস বলেন, কোন জায়গায় দুর্যোগ হলে প্রথম যে কাজ সেটা হচ্ছে উদ্ধার। যেটা গতকালই আমরা করতে পেরেছি। এখন আমরা পরিপূর্ণভাবে মানবিক দিক বিবেচনা করে সব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের পাশে থাকবো।
তিনি বলেন, আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আজকে কথা হয়েছে, উনিও বলেছেন যে এ ঘটনার ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করার হবে। তারপরই সব ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পর্যাপ্ত পরিমাণের অনুদান দেওয়া হবে। যাতে করে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারেন, যেন ব্যবসায় আবার নামতে পারেন। এ অর্থটাকে যেন তারা পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। সেটা বিবেচনা করে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছি।
মেয়র বলেন, ২০১৯ সালে আমাদের সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কোর্টের মামলার কারণে আমরা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। যেহেতু এটি একটি বিপর্যয়ের মধ্যে আছে তাই আমাদের কিছু সময় দিতে হবে। আমরা আগে মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করে তাদের কিছু ক্ষতিপূরণ বা অনুদান দেব। আর এটা নিশ্চিত করার পরই তাদের নিয়ে আমরা বসবো। যেন মার্কেট নির্মাণের পরে তারা এখানে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে।
অগ্নি দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাস্তায় ফায়ার হাইড্রেন্ট বসানোর বিষয় জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এ মেয়র বলেন, ঢাকা নগরী যেভাবে অপরিকল্পিত সে হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন পুরান ঢাকায় নতুন করে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা খুবই দুরূহ। তবে এর বিকল্প হিসেবে পর্যাপ্ত জলাশয় রাখা যায় কিনা সেটার দিকে আমরা নজর দেব। নতুন এলাকাগুলো- যেগুলো আমরা পরিকল্পিত আকারে নির্মাণে যাচ্ছি সেখানে এই ফায়ার হাইড্রেন্টের ব্যাপারটা আমরা বিবেচনা করব। যদিও ফায়ার হাইড্রেন্ট বিষয়টা অত্যন্ত ব্যয়বহুল তাই সিটি কর্পোরেশনের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। এখানে সরকারের সহযোগিতার প্রয়োজন আছে।
বঙ্গবাজার অগ্নি দুর্ঘটনায় অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করছিলেন দীর্ঘদিন ধরে তাদের সেখান থেকে উচ্ছেদের পরিকল্পনা হচ্ছে এবং এ দুর্ঘটনাকে অনেক ব্যবসায়ী নাশকতা মনে করছেন, এ বিষয়ে মেয়রের তাপসের মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টা যদি এমন হয় তাহলে ইঙ্গিত তো আমাদের উপর আসবে। এমন কিছু না আসলে। এটা একটি দুর্ঘটনা। তদন্তে বেরোবে এটা কোথা থেকে শুরু হয়েছে এবং কি কারণে হয়েছে। তবে আমরা যদি এটা করতাম তাহলে তাদের নিয়ে বসতাম মার্কেট নির্মাণের জন্য এবং আমরা মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নিতাম।
তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে অন্য মার্কেটগুলো নির্মাণে গিয়েছি। তবে এ মার্কেটটা নির্মাণের সে সময় তাদের সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়ে ওঠেনি। আমাদের পরিকল্পনা ছিল ভবিষ্যতে আমরা এখানে (বঙ্গবাজার) মার্কেট করব।
তিনি আরও বলেন, এখন যেহেতু দুর্ঘটনার কারণে জায়গাটা খালি হলো তাই আমরা তাদের নিয়ে বসব কিভাবে তারা চায়, সে বিষয়টি জানতে। প্রধানমন্ত্রীকে আমরা আমাদের নতুন নকশা দেখাবো। যেহেতু এটা পাইকারি বাজার তাই পাইকারি মার্কেট হিসেবে এটাকে তৈরি করতে হবে। এখানে অন্যরকম কোনো মার্কেট করলে হবে না। তাই এ সামগ্রিকতা বিবেচনা করে আমরা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করব। তবে যারা ক্ষুদ্র এবং ক্ষতিগ্রস্ত, নতুন মার্কেটে তারাই প্রথম অগ্রাধিকার পাবে। তাদেরই আগে পুনর্বাসন করা হবে।
গোড়ানে খেলার মাঠের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে মেয়র তাপস বলেন, ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হলে যেটা প্রথম প্রয়োজন সেটা হলো খেলার মাঠ, সেই খেলার মাঠ আমাদের নেই। ছেলেমেয়েদের খেলার উপযুক্ত জায়গা নেই এবং বয়স্কদের হাটার যায়গা নেই। নির্বাচিত হবার পর থেকে আমরা বলেছি, প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ন্যূনতম একটি করে খেলার মাঠ এবং সেখানে খেলার উপকরণ আমরা নিশ্চিত করতে চাই। সেটাই আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে এযাবৎ করে আসছি। সেই ধারাবাহিকতায় আজকে গোড়ান খেলার মাঠের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম। এখানে ফুটবল ক্রিকেট নেট প্র্যাকটিস এবং বাস্কেটবলসহ মাল্টিপারপাস খেলাধুলা করা যাবে। এমনকি ছোট্ট বাচ্চাদের খেলার জন্য এবং বয়স্কদের হাঁটার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়েছে।
তাপস বলেন, এ মাঠটি বিভিন্নভাবে দখল করা ছিল। প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আমরা জায়গাটা উদ্ধার করতে পেরেছি। আমি মনে করি খুব দ্রুততার সঙ্গে এ খেলার মাঠটি প্রস্তুত করা যাবে।