রাজধানীর মিন্টো রোডে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ( বাংলাবার্তা)
পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেডের মালিকসহ চার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বসুন্ধরায় তেলাপোকা মারার স্প্রে’র বিষক্রিয়ায় অবহেলায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি।
বৃহস্পতিবার ( ২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবিতে নিজ কার্যালয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন জানান ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। চলতি বছরের ভাটারা থানায় নিহত দুই শিশুর বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, বিষ স্প্রে কার পরবর্তীতে তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে দুই শিশুর মৃত্যু হওয়ার বিষয়টির প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দুই একদিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করবে গোয়েন্দা পুলিশ। এই ঘটনায় চার আসামি গ্রেফতার হয়েছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান( ৩৭), ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ফরহাদুর আমিন ( ৩৩), সিনিয়র এক্সিকিউটিভ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট মো. মোছলে উদ্দিন শামীম ( ৩০)। স্প্রে অপারেটর মো. টিটু মোল্লা ( ৩৭)।
হারুন অর রশীদ বলেন, ১৪ ও ১০ বছরের অবুঝ দুই শিশু পেস্ট কন্ট্রোলের কারণে অকালে ঝড়ে গেলো। তারা মায়ের কোল খালি করে চলে গেছে। আমরা তদন্ত করতে গিয়ে তাৎক্ষনিকভাবে পেস্ট কন্ট্রোলের কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং ম্যানিজিং ডাইরেকটরকে গ্রেফতার করেছিলাম। তখন আমরা বলেছিলাম আরও যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে চার্জশিট দেওয়া হবে। আজকে আমরা চারজনকে এ সঙ্গে সম্পৃক্ততা পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে আমরা চার্জশিট প্রদান করবো। আমরা চার্জশিট প্রদান করার আগে এ বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ অর্থাৎ পেস্ট কন্ট্রোল নিয়ে যাদের অভিজ্ঞতা আছে তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা বলছেন, এইসব কেমিকেল বাসা বাড়ির জন্য ক্ষতিক্ষর। এলোমিনিয়াম ফসফেট ব্যবহারের কারণে এই মৃত্যুটা ঘটেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ছাড়াও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। চিকিৎসকরাও একই কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে মত দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট মোছলে উদ্দিনকে পেষ্ট কন্ট্রোল প্রয়োগের পর নিহত শিশুর পরিবার যখন অস্থিরতা বোধ করছিল। শিশুদের মা ফোন করে বলেছিলেন, পেষ্ট কন্ট্রোল স্প্রে করার পর আমার ছেলেরা কেমন যেন এলোমেলো করছে। তখন বলেছে তিন থেকে চার ঘন্টা পরে এটা ঠিক হয়ে যাবে কোন চিকিৎসার দরকার নাই।
তিনি আরও বলেন, এটি প্রয়োগের আইন কানুন না জেনে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। চিকিৎসার প্রয়োজন সে কথা বলে কালক্ষেপণ করার জন্য মৃত্যুটি ঘটেছে। তাছাড়া আমরা জানি পেস্ট কন্ট্রোল স্থানে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা বায়ু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। অথচ মুসলিম উদ্দিন বাদিকে সঠিক তথ্য না দিয়ে পেস্ট কন্ট্রোল করার তিন চার ঘন্টার মধ্যে বাসায় অবস্থান করা যাবে বলে তাকে জানায় এবং তারা এমন ভুল তথ্য উপস্থাপন করে। বাসায় এলোমেনিয়াম ফসফেট বাসায় ব্যবহার করা যাবে না। এ সম্পর্কে তারা না জেনেই বিক্রির জন্য বিভিন্ন আবাসিক এলাকার বাসা-বাড়িতে ব্যবহার করার জন্য বিক্রি করছে।
গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, তাদের উচিত ছিল পেস্ট কন্ট্রোল প্রয়োগের পরে নিয়ম-কানুনটা বলে দেওয়া। নিয়ম-কানুন না বলার কারণে আজকে দুইটি শিশু বাবা-মায়ের কোল শূন্য করে চলে গেলেন। এ ঘটনাটা আমাদের গুলশান গোয়েন্দা বিভাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে অতি অল্প সময়ে আসামীদের গ্রেফতার করেন। বাকি আসামীদের বিরুদ্ধে আমরা চার্জশিট প্রদান করেছি।
বাংলাবার্তা/এমপি