সমাবেশ স্থলে প্রতীকী ফলকে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
দীর্ঘ প্রতিক্ষীত স্বপ্নের মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় উত্তরা সেক্টর-১৫ নম্বরের সি-১ ব্লকের খেলার মাঠে সমাবেশ স্থলে প্রতীকী ফলকে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করা হয়। এরপর সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশের নতুন সংযোজন হলো মেট্রোরেল। মেট্রোরেল জিডিপিতে অবদান রাখবে। রাজধানীর যানজট কমাবে এবং অর্থ সাশ্রয় করবে।’
এসময় তিনি সবাইকে যত্ন সহকারে মেট্রোরেল ব্যবহারের পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন মেট্রোরেলের কাজ শুরু করি, তখন এলো আঘাত। মেট্রোরেলসংশ্লিষ্ট সাত জন জাপানি কর্মী হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হন। এরপরও জাপান আমাদের সঙ্গে থেকে কাজ করেছে। আমরা আজ তাদের স্মরণ করছি। তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আমরা যে কর্মীদের হারিয়েছে, তাদের স্মরণে একটি স্মৃতি ফলক নির্মাণ করে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করে আমরা সারাবিশ্বে মর্যাদা পেয়েছি। সে তালিকায় আজ আরেকটি সাফল্য সংযোজিত হলো। এমআরটি লাইন-৬ উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত লাইন নির্মাণ হবে। মোট ২১.২৬ কিলোমিটার পথ নির্মাণ হবে। আজ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হলো। বাকি অংশও পর্যায়ক্রমে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই মেট্রোরেল চারটি মাইল ফলক নিয়ে এসেছে। প্রথমত, এটি বৈদ্যুতিক ট্রেন, দ্বিতীয়ত মেট্রোরেল ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে, তৃতীয়ত, বাংলাদেশ দ্রুত গতিসম্পন্ন ট্রেনের যুগে প্রবেশ করলো চার, মেট্রোরেল স্মার্ট বাংলাদেশ সংযোজন করলো।’
নির্বাচনে ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম ছয়টি মেট্রোলাইন নির্মাণ করবো। সেভাবে পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করেছি এবং এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে। আমাদের দেশের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি যারা, তারা যেন সহজে মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারেন সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা কোচ, মুক্তিযোদ্ধারা চলবেন বিনা পয়সায়। এসব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে মেট্রোরেলে।’
সারাবিশ্বে মেট্রোরেল আধুনিক পরিবহন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেট্রোরেল মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলবে। একসময় আমাদের আর বিদেশি শক্তির ওপরে নির্ভর করতে হবে না। আমরা মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য স্মার্ট জনশক্তি গড়ে তুলবো।’ এসময় তিনি এসময় মেট্রোরেলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় এ কাজ সফল হয়েছে উল্লেখ করেন, তাদের ধন্যবাদ জানান।
সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা ও যাত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেট্রোরেলকে সংরক্ষণ করতে হবে। সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মেট্রো ব্যবহারে সবাই যত্নবান হবেন। সবাইকে সচেতন হতে হবে। নিয়মতান্ত্রিভাবে ব্যবহার করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার সরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। স্বল্প, মধ্য, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। যে কারণে আমরা অনেক কিছু অর্জন করতে পেরেছি। এ মর্যাদা ধরে রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে বলে গাড়ি কিনতে পারছে। আর সেজন্য যানজট হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়, মানুষের উন্নয়ন হয়, এটা সত্য প্রমানিত হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন। সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার আগে সকাল ১১টায় মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে আসন গ্রহন করেন তিনি। এসময় সমাবেশে আসা অতিথিদের প্রতি হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। এসময় রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা, তিন বাহিনী প্রধানসহ বিদেশি কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তব্য শেষে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী। লাল সবুজের পতাকা নেড়ে ট্রেনের উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি ছোটবোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করে আগারগাঁও স্টেশনে পৌঁছান।
উল্লেখ্য, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল স্থাপনে চলমান এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিলো ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর পর্যন্ত যুক্ত হওয়ায় এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। এরমধ্যে জাইকা ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে আর সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করবে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।