জুনাইদ আহমেদ পলক। বাংলা বার্তা
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না এবং সততার প্রশ্নে জিরো টলারেন্স নীতির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনে বিটিসিএলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন।
পলক বলেন, আমাদের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যেসব কোম্পানি আছে, সেগুলোর কোনোটিই লোকসানে থাকতে পারবে না, সবগুলোকে লাভে যেতে হবে। বর্তমান অর্থবছরের যে সময়টুকু আছে সেই সময়ের ভেতরে বিটিসিএলকে প্রফিটে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে। সরকারের বিনিয়োগ এবং বিটিসিএলের জনবলের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে।
এজন্য সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আসার বিষয়ে সতর্ক করেছেন তিনি।
বিটিসিএলকে লাভজনক করার জন্য আমাদের সকলকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, স্বল্প সম্পদ এবং জনবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের বাৎসরিক অডিট রিপোর্ট আমি দেখবো, আর যদি না থেকে থাকে তাহলে করতে হবে, পাশাপাশি অডিট রিপোর্ট কারা করছে তাদের ক্রেডিবিলিটি আমাদের খেয়াল করতে হবে। সাথে সাথে এক্সটার্নাল আইটি অডিট করতে হবে, এটা যদি থাকে তাহলে আমাকে দেখাবেন, আর যদি না থাকে তাহলে সেটাকে খুব দ্রুত করতে হবে। সাথে সাথে ইন্টারনাল একটা অডিট করতে হবে, যেটা কোথাও প্রকাশিত হবে না, কিন্তু আমি দেখবো। আমাদের বোর্ড কম্পোজিশনের বাইরে যদি আউটসোর্স করার কোনো সুযোগ থাকে তাহলে সেটা আমরা করবো। কারণ, লিডারশিপ ম্যাটার্স, রাইট লিডারশিপ না থাকলে কোনো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান বা দেশ এগিয়ে যেতে পারে না।
বিটিসিএলের সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকল প্রকার জনবলের পরিসংখ্যান আমাকে দিতে হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন বিভাগের সর্বশেষ কর্পোরেট স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান থেকে থাকলে আমাকে দেবেন, আর না থেকে থাকলে সেটা প্রস্তুত করবেন, কে তৈরি করেছে বা করবে সেটাও আমি দেখবো। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং সংস্থার মতো অ্যানুয়াল পারফরমেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট যদি আপনাদের থাকে তাহলে আমাকে দেখাবেন, যদি না থাকে তাহলে সেটা করতে হবে। আমি আজ বিটিসিএলের লিডিং রেভিনিউ সোর্স কোনটা সেটা জানতে চাই এবং গত পাঁচ বছরে এটার ট্রেন্ড কি ছিলো সেটা জানাতে হবে। সাথে সাথে ব্যয়ের খাত এবং গত পাঁচ বছরের ব্যয়ের ট্রেন্ড আমাকে জানাতে হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আয় ও ব্যয় জানতে পারলে, সে অনুসারে কোথায় খরচ কম বা বেশি হচ্ছে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সময়, অর্থ, ব্যয় কমিয়ে কীভাবে এই খাতকে দেশ ও মানুষের সেবায় নিয়োজিত করা যায় সেটি দেখতে হবে।
পলক বলেন, সততা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা হবে বিটিসিএলকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তোলার মূলমন্ত্র। কোনো কিছু গোপন করা যাবে না। গোপন করা মানেই সেখানে অস্বচ্ছতা রয়েছে।
পলক বলেন, আগামী পাঁচ মাসে আমরা কোথায় সার্ভিস ডেলিভারি বাড়াবো, এবং কোথায় ব্যয় কমাবো, কোথায় মড়া ডাল কেটে ফেলবো সেটা নির্ভর করবে এইসব রিপোর্টের উপর। ক্যান্সার আক্রান্ত একটি আঙ্গুলকে বাঁচাতে গিয়ে আমি জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। যখন আমি গত পাঁচ বছরের আয়-ব্যয়ের ট্রেন্ড ধরতে পারবো তখন অপচয় থামানোর দিকে মনোযোগ দিতে পারবো। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট গভর্নমেন্ট গড়তে চাচ্ছি, সেখানে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ডেটা ড্রিভেন ডিসিশন মেকিংকে উৎসাহিত করা। বিটিসিএল'এর কোনো কিছু কারো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে, আবেগতাড়িত হয়ে, কোনো গোষ্ঠী বা সিন্ডিকেটের প্রভাবে হবে না, বিটিসিএল'এ তাই-ই হবে যেটা দেশের মানুষের জন্য ভালো এবং অপচয় রোধ করে সেবার মান বাড়ানো যাবে। সময়, অর্থ, ব্যয় রোধ করে সেবার মান বৃদ্ধি করাই হবে আমাদের মূল লক্ষ্য।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যে কোনো প্রকল্প প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদেরকে দেশ ও মানুষের সেবা কতটুকু হবে, রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট, জাস্টিফিকেশনকে বিবেচনা করতে বলেছেন। এছাড়া নতুন কোনো সিদ্ধান্ত বা প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। বিটিসিএল'কে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, লাভজনক হতে হবে, এবং ৪১ এর স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট বিটিসিএল হতে হবে।
পলক বলেন, সততা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা হবে বিটিসিএলকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তোলার মূলমন্ত্র। কোনো কিছু গোপন করা যাবে না। গোপন করা মানেই সেখানে অস্বচ্ছতা রয়েছে।
বাংলাবার্তা/এআর