খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার (ছবি: সংগৃহীত)
ভরা মৌসুমে আমন চালের দাম বাড়বে এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়িয়েছেন এখন সেভাবেই কমাতে হবে বলে হুসিয়ারি দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বিকালে খাদ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ধান চালের বাজার ঊর্ধ্বগতিরোধ বিষয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুশিয়ারি দেন।
মিলগেটে ২ টাকা দাম বাড়লে, পাইকারী বাজারে ৬ টাকা কেন বাড়বে এমন প্রশ্ন রেখে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, অবৈধ মজুতকারী কিংবা অহেতুক দাম বাড়িয়ে দেওয়া ব্যবসায়ী কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে। বিনা লাইসেন্সে যারা ধানের স্টক করছেন তারা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিবেক না থাকলে সততা না থাকলে মানুষ হওয়া যায় না উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, রেডি করা চাল বাজারে ছাড়তে হবে। সংকট তৈরি করা যাবে না। প্রচুর ধান আছে। সরবরাহের ঘাটতি নেই।
এ সময় আরসি ফুড ও ডিসি ফুডদের ফুড গ্রেইন লাইসেন্স বিহীন মজুতদারি বন্ধ করতে ও লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য নির্দেশনা দেন মন্ত্রী।
নওগাঁ ধান চাল মালিক সমিতির নিরোদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, মোটা চালের দাম বাড়েনি। সরু ও মোটা চালের দাম এক নয়। মোটা চালের দাম ২-৩ টাকা বেড়েছে। গত ইরি মৌসুমের জিরাশাইল চালের দাম ৫-৬ টাকা বেড়েছে। যেভাবে ঢালাওভাবে মিলারদের দায়ী করা হচ্ছে তা ঠিক নয়। কর্পোরেট কোম্পানিগুলো ধান চালের বাজারকে অস্বাভাবিক বাড়াচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
দিনাজপুরের ব্যাবসায়ী সমিতির হান্নান বলেন, সরকারিভাবে একইসাথে সব জেলা থেকে প্রকিউরমেন্ট করায় মোটা ধানের সংকট হয়। নির্বাচনের কারণে সবাই ব্যস্ত ছিলেন, ছাটাই ও বাজারজাত কম হয়েছে। ইতোমধ্যে ধানের দাম ও চালের দাম কমতে শুরু করেছে। মনিটরিং বাড়ালে দাম আরও কমবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দিনাজপুর চাল মালিক সমিতির মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সকল ব্যবসায়ী বাজারে প্রতিযোগিতা করে ধান কেনায় দাম বেড়েছিল। এখন ধান কেনা বন্ধ আছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু করলে বাজার স্বাভাবিক হবে বলেও জানান তিনি।
চাল ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন বলেন, কৃষি বিভাগের উৎপাদন তথ্য সঠিক কি-না তা নিশ্চিত করতে হবে। তথ্য থাকে উৎপাদন উদ্বৃত্ত কিন্তু বাস্তবে তা হয় না।
বাংলাদেশ অটো মেজর হাসকিং মিল মালিক সমিতির সেক্রেটারি এইচ আর খান পাঠান সাকি বলেন, সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক বাজার প্রত্যাশা করি আমরা। চালের বাজার বাড়লে ছোট মিল মালিকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আশুগঞ্জের ব্যবসায়ী বলেন, মিলারদের কোনো সিন্ডিকেট নেই। একজন আরেক জনের প্রতিযোগী। বেচা বিক্রি আগের থেকে কমেছে-দামও কমেছে।
প্রাণ গ্রুপের পরিচালক কামরুজ্জামান বলেন, বাজার বাড়তি থাকায় তারা ধান কিনছে না। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকায় বাজারের সঠিক চরিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে না এবং সরকারের প্লানিং ও সঠিকভাবে কাজ করছে না।
এসিআই এর রুবেল বলেন, এ বছর নন প্রফেশনাল লাইসেন্স বিহীন লোক ধান কিনছে। তারা অবৈধ মজুত করে বাজার অস্থির করছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন, এফপিএমইউ এর মহাপরিচালক মো. শহিদুল আলম, খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, বাংলাদেশ অটো মেজর রাইস মিল মালিক সমিতি, বাবু বাজার বাদামতলী বনিক সমিতি, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি, চাল আমদানিকারকদের প্রতিনিধি ও খুচরা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাবার্তা/এসএ/এএইচ