পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ (ছবি: বাংলাবার্তা)
ঢাকা: সমগ্র বিশ্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে, একই সাথে কাজের আগ্রহ প্রকাশ করায় বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অডিটোরিয়ামে উগান্ডার কাম্পালায় অনুষ্ঠিত ১৯তম ন্যাম সামিট ও ৩য় সাউথ সামিটে অংশগ্রহণ শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রণালয়ের সচিব (মারিটাইম এফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার এডমিরাল (অব:) মুহ: খুরশেদ আলম ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দুই শীর্ষ সম্মেলনে কান্ট্রি স্টেটমেন্ট দেওয়ার পাশাপাশি সাইডলাইনে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘের মহাসচিব, কমনওয়েলথ মহাসচিবের সাথে বৈঠকসহ দুদিনে ১৭টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রথম দিনেই ১২টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বহু দেশের প্রতিনিধিদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং একসাথে কাজের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বিএনপির সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, 'এসব দেখে বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে গেছে, তারা আরও আবোল-তাবোল বলা শুরু করেছে।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সামিটের সাইডলাইনে যেসব দেশের সাথে বৈঠক হয়েছে, আমরা কয়েকটি বিষয় প্রাধান্য দিয়েছি। এর মধ্যে ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসি, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যু অন্যতম। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের বিষয়েও আলাপ হয়েছে। এ সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যিনি একইসাথে উপ-প্রধানমন্ত্রী, তার সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি শুরু করতে বলেছি এবং তিনি ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, গাজা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অনুরোধ করেছি এবং তিনি যে রাফাহ সীমান্তে গিয়ে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ নিরসনের আহবান জানিয়েছিলেন সে জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।
মন্ত্রী আরও বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আসার পর থেকে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য অনেকটাই কমেছে। আমরা আবার দেশটির সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করেছি। মিয়ানমার থেকে নানাভাবে মাদক আসে এবং সেখানে বিভিন্ন গ্রুপ নিজেরা বিবদমান থাকলেও একত্রে মাদক ব্যবসায় জড়িত সেটি তারা স্বীকার করেছেন এবং এর প্রতিকারের উদ্যোগ নিতে সম্মত হয়েছেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতকেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান ড. হাছান মাহমুদ।
আরও পড়ুন: ‘গণতন্ত্র বিকলাঙ্গ করে সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটিয়েছেন শেখ হাসিনা’
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলো নিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, উগান্ডায় কৃষির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। দেশটিতে তুলা চাষ করা যায়। পাম ওয়েলও চাষ করা যায়। আমরা পরিকল্পনা করছি, শিগগিরই একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দল সেখানে পাঠাবো। বেলারুস, ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা প্রত্যেকে আগ্রহ দেখিয়েছে। সিঙ্গাপুর, বাহরাইন, সৌদি আরব, কাতারসহ যেসব দেশে আমরা জনশক্তি রপ্তানি করি সেখানে প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যা সমাধানের জন্যও আলাপ হয়েছে এবং পাশাপাশি ফিলিস্তিন, নেপাল, বেনিন, বতসোয়ানার সাথেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা জানান মন্ত্রী।
উগান্ডার কাম্পালায় সদ্য সমাপ্ত ন্যাম এবং ৭৭ জাতি গ্রুপ ও চীনের তৃতীয় দক্ষিণ শীর্ষ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ এ মুহিত, কেনিয়া ও উগান্ডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারেক মুহাম্মদ প্রমুখ।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরের সাক্ষাতের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার দপ্তরে সাক্ষাৎ করেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুলায়ে সেখ (Abdoulaye Seck)।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য অনুদান (গ্রান্ট) হিসেবে ৩১৫ মিলিয়ন ডলার এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের হোস্ট কমিনিটির উন্নয়নের জন্য ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার সহজ ঋণ (সফট লোন) দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ৫৬ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ১৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আছে এবং বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সাথে কার্যক্রম আরও বৃদ্ধির কথা বলেছেন জানান ড. হাছান মাহমুদ।
বাংলাবার্তা/এসএ/এএইচ